নির্বাচন ঘিরে উত্তাপ: অন্তর্বর্তী সরকারের বার্তা ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

রাজনীতিতে হঠাৎ উত্তাপ। ইস্যু নির্বাচন। ২০২৬ সালের রোজার আগেই নির্বাচন হতে পারে— এমন আভাস মিলেছে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে। অন্তত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস উইং এমন ইঙ্গিত দিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত প্রস্তুতি ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করতে বলেছেন তিনি।
এমন প্রেক্ষাপটে নির্বাচন নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক দলগুলো। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব দলীয় অবস্থান ও অভ্যন্তরীণ বিরোধ।
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান এক জনসভায় লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানা থেকে বিএনপি কর্মী ও সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, "এমন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের কল্পনাও করা যায় না।"
যদিও দলটি শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারের দেওয়া ডিসেম্বর-জুন সময়সীমাকে স্বাগত জানিয়েছিল। পরে আবার বিভিন্ন সময়ে ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিলের সম্ভাব্য সময়ের কথাও বলেছে।
তবে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলছেন, এতে কোনো মতভেদ নেই—
“আমরা ধারাবাহিকভাবে বলেছি, ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলে মধ্যে নির্বাচন হোক। অবস্থানের পরিবর্তন নয়, এটি সময়সীমার স্পষ্টীকরণ।”
তবুও নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কথা বলছে জামায়াত। তাহেরের ভাষায়:
এখনো ভোটার তালিকা হালনাগাদ হয়নি
ডিসি, এসপি, ইউএনওসহ প্রশাসনে দলীয় লোকজন আছেন
নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন আছে
স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে সমন্বয় সভা হয়নি
তিনি বলেন, “লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত না করে নির্বাচন ঘোষণা করা অনৈতিক হবে।”
জামায়াত এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি) উভয়েই বলছে, মৌলিক রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন অর্থহীন।
জুলাই ঘোষণাপত্র ও সাংবিধানিক সংস্কার বাস্তবায়নের দাবি তারা পুরনো, তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই বিষয়ে তারা আরও উচ্চকণ্ঠ হয়েছে।
জামায়াতের অভিযোগ, কিছু রাজনৈতিক দল সংস্কার প্রক্রিয়ায় বাধা দিচ্ছে। ডা. তাহের বলেন, “কিছু দল সংস্কারের বিরোধিতা করছে, ঐকমত্য গঠনে বাধা দিচ্ছে।”
এনসিপির বক্তব্য: ‘পরিবর্তন ছাড়া নির্বাচন অর্থহীন’
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসাইন বলেন,
“শুধু সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য নির্বাচনে যাওয়ার কোনো অর্থ নেই।”
তিনি আরও বলেন: “বাংলাদেশে নির্বাচন যে হবে, সেটা সবাই বলেছে। কিন্তু সেই নির্বাচন সংস্কার ছাড়া হলে তা জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে না।”
সংস্কারের প্রশ্নে তাদের মতে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে— কিছু দল এই সরকারকে সংস্কার করার ম্যান্ডেটহীন বলে উপস্থাপন করছে। এতে করে সংস্কারের দায়িত্ব ভবিষ্যৎ সরকারের হাতে ঠেলে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
জামায়াত ও এনসিপি সরাসরি কারও নাম না নিলেও বোঝা যাচ্ছে, তাদের ইঙ্গিত মূলত বিএনপির দিকেই।
সংবিধান সংস্কার, ক্ষমতার ভারসাম্য, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ নানা বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে।
একই সময়ে বিএনপি নির্বাচনের সময় নিয়ে কিছুটা নমনীয়তা দেখালেও— যেমন তারা ফেব্রুয়ারি নির্বাচনেও রাজি হয়েছে বলে জানা গেছে— সংস্কার ইস্যুতে জোরালো অবস্থান দেখাচ্ছে না বলেই অভিযোগ রয়েছে জামায়াত ও এনসিপির।
নির্বাচন ঘিরে নতুন করে আলোচনায় এসেছে সময়সীমা, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা ও সংস্কার প্রশ্ন। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তুতির বার্তা দেওয়া হয়েছে, তবে রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং আস্থার সংকট এখনো বহাল। নির্বাচনের পূর্বে এই সংকটগুলো সমাধান না হলে প্রক্রিয়াটি নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।
