নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে মতভেদ, তবে বিএনপি কি সংশয়ে আছে?

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান এখনো পুরোপুরি সমন্বিত নয়। নির্বাচনকাল, মৌলিক সংস্কার এবং স্থানীয় সরকারের নির্বাচন এগিয়ে আনার দাবিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দলের মধ্যে মতানৈক্য ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রায় একই সুরে বলছে— আগে মৌলিক সংস্কার ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন, তারপর জাতীয় নির্বাচন। এ দাবির প্রতি একাত্মতা জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল। খবর, বিবিসি বাংলার।
অন্যদিকে বিএনপি শুরু থেকেই ২০২৬ সালের রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। যদিও দলটি পরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে বলে জানা যায়। সে অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনও ফেব্রুয়ারির একটি সম্ভাব্য সময়সূচির দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান কিছুটা পরিবর্তিত হলেও দলটি পুরোপুরি সময়সূচির বাইরে যাচ্ছে না। কখনো ফেব্রুয়ারি, কখনো এপ্রিল—ভিন্ন ভিন্ন সময়ে নির্বাচন হোক, তাতে আপত্তি নেই বলেই বারবার ইঙ্গিত দিয়েছে তারা। তবে এই অবস্থান দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবর্তন করেছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) একটু বেশি সরব। যশোরে দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ১১ জুলাই বলেন, “বিচার, সংস্কারসহ জুলাই অভ্যুত্থানের দাবির প্যাকেজ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন চাই না। প্রয়োজনে আরেকবার গণঅভ্যুত্থান ঘটানো হবে।”
এমন বক্তব্যে প্রশ্ন উঠেছে— এনসিপি কি তাহলে ফেব্রুয়ারির সম্ভাব্য ভোট থেকে সরে আসছে?
নির্বাচনের সময় নিয়ে বিএনপির কোনো দ্বিধা রয়েছে কি না—তা স্পষ্টভাবে বোঝার চেষ্টা চলছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের পক্ষ থেকে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আমরা অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি। সত্তর অনুচ্ছেদ, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসহ অনেক বিষয়েই আমরা যুক্তিসংগত প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু সব বিষয়ে একমত হওয়া যেমন সম্ভব নয়, তেমনি যৌক্তিকও নয়।”
তিনি বলেন, “সংস্কারের নামে যদি এমন কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয়, যা রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট করবে, তাহলে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
সালাহউদ্দিন মনে করেন, এই মতানৈক্য অনেকটাই নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দর কষাকষির অংশ। তার ভাষায়, “অনেক দল আছে যাদের জনপ্রতিনিধিত্ব খুবই সীমিত। তাদের বড় চাওয়া-পাওয়ার কথা থাকতেই পারে। তবে আমরা দেখি, মাঠে একরকম বক্তব্য থাকলেও আলোচনার টেবিলে সেই অবস্থান অনেকটাই নমনীয় হয়ে যায়।”
সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনকাল, সংস্কার কাঠামো ও প্রক্রিয়া নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও তারা সক্রিয়ভাবে প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। ফেব্রুয়ারির সম্ভাব্য ভোট নিয়ে এখনই চূড়ান্তভাবে সংশয়ের কথা বলা কঠিন।
তবে এনসিপি ও জামায়াতের পক্ষ থেকে ‘শর্তাধীন’ অংশগ্রহণের বার্তা, আর বিএনপির সীমিত সম্মতির ধারা মিলে একটা বিষয়ই স্পষ্ট হয়—রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিতে চায়, তবে তারা চাইছে আরও কিছু ছাড় এবং নিশ্চয়তা।
নির্বাচনকাল ও সংস্কার ইস্যুতে দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য থাকলেও তা এখনো রাজনৈতিক সমঝোতার আওতায় রয়েছে। বিএনপি এখনো নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে সরে আসেনি, বরং তারা রাজনৈতিক কৌশলগত অবস্থান নিচ্ছে বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা। ফলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা এখনো অম্লান, যদিও চূড়ান্ত রূপরেখা নির্ভর করছে আগামি কয়েক মাসের সমঝোতা ও সংলাপের গতিপ্রবাহের ওপর।
