বাকৃবির টেকনিক্যাল সহায়তায় ময়মনসিংহে প্রযুক্তিনির্ভর পোল্ট্রি হাবের যাত্রা শুরু

নিরাপদ এবং অ্যান্টিবায়োটিক-মুক্ত ব্রয়লার উৎপাদনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ও কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ)-এর টেকনিক্যাল সহায়তায় ক্ষুদ্র খামারিদের জটিলতা সমাধানে এবং পোল্ট্রির মান নিয়ন্ত্রণে প্রায় ১৫০ জন খামারির উপস্থিতিতে মানু ফার্মস ভাবখালী হাবের উদ্বোধন করা হয়েছে।বুধবার (৯ জুলাই) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ভাবখালীতে ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে মানু ফার্মস এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও মুহাম্মদ শাহীনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেজিএফের নির্বাহী পরিচালক ড. নাথু রাম সরকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাউরেসের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাভিদুল হক ভূঞা, বাকৃবির পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী, প্রকল্প পরিচালক এবং পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দাস, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মো. নজরুল ইসলাম, ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি'র এগ্রিকালচার ফাইনান্সের প্রিন্সিপাল অফিসার মো. ইসমাইল হোসেন, ইনফো ওয়ার্ল্ড গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. শফিকুল ইসলাম তুহিন, ইনফো ওয়ার্ল্ড গ্রুপের সিইও কর্নেল (অবঃ) হোসাইন মাহমুদ চৌধুরী, ডিএমএ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রতিষ্ঠাতা হাসান রাহমান।
উক্ত আয়োজনে ফার্মটির প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও মুহাম্মদ শাহীন বলেন, "২০১১ সালে মানু ফার্মস যাত্রা শুরু করে প্রান্তিক খামারিদের জন্য। আমরা কৃষিখাতে প্রযুক্তির সহজ সমাধান আনতে কাজ করছি। খামারে বাচ্চা মুরগির সুস্থতার জন্য পরিষ্কার ও নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ দরকার। তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, আলো ঠিক রাখতে হয়। এজন্য আমরা একটি ডিভাইস ও অ্যাপ তৈরি করেছি যেটি দিয়ে মোবাইল ফোনেই খামারের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, আলো ও অ্যামোনিয়া গ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এমনকি দূর থেকেও স্প্রিঙ্কলার চালু করা সম্ভব।
তিনি আরো বলেন, "ভাবখালী হাবে পোল্ট্রি ও ক্যাটেলের জন্য সপ্তাহে তিন দিন বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত বিনামূল্যে ডাক্তার সেবা পাবেন। এখান থেকে খামারের সব জিনিসও মিলবে পাইকারি দামে। আমাদের লক্ষ্য- খামারিদের বাঁচানো, তাদের লাভবান করা, যাতে দেশ এগিয়ে যেতে পারে।"
অধ্যাপক শওকত আলী বলেন, "আমাদের এমন মার্কেটিং সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে যাতে ছোট খামারিরা আর্থিক ক্ষতির মুখে না পড়ে। সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকলে আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না। আমাদের দেশে ৬০ থেকে ৭০ লাখ মানুষ পোল্ট্রি খাতে সরাসরি জড়িত। রেস্টুরেন্টগুলোতে কাবাব, গ্রিলসহ নানা খাবার বিক্রি হয়, যা মিলিয়ে এই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে প্রায় ১ কোটি মানুষ যুক্ত। তাই শিল্পকে আরও উন্নত করতে সঠিক ব্যবস্থাপনার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।"
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক জাভিদুল হক ভূঞাঁ বলেন, "আপনারা এমন একটি ব্র্যান্ড তৈরি করুন যাতে ব্রয়লার ও ডিম নিরাপদ হয়। কিছু খাবার ও ওষুধের কারণে মুরগির দেহে রেসিডিউ থেকে যায় যা মানুষের শরীরে জমে নানা ধরনের মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে। অর্গানিক ফার্মিং করলে পণ্যের মান ও দাম, দুটোই ভালো হবে।”
অধ্যাপক সুবাস চন্দ্র দাস বলেন, "আপনাদের একমাত্র উদ্দেশ্য যদি মুনাফা লাভ করাই হয় তাহলে আজকের এই অনুষ্ঠানের লক্ষ্য আদায় হবে না। আপনারা সফল হলেই সফল হবে এই প্রকল্প।"
উল্লেখ্য, মনু ফার্মসের একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে যার মাধ্যমে খামারি দৈনন্দিন কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক হিসাব-নিকাশ, গবাদি পশুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা করতে পারবেন।