দীর্ঘায়ু ও সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি হতে পারে উদ্ভিজ্জ খাদ্যাভ্যাস: হার্ভার্ডের গবেষণা

উদ্ভিজ্জ খাদ্যাভ্যাস শুধু স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়, এটি দীর্ঘজীবনের সম্ভাবনাও বাড়িয়ে দিতে পারে—এমনটাই জানাচ্ছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণা। গবেষকদের মতে, তরুণ বয়স থেকেই নয়, এমনকি মধ্যবয়সে এসেও যদি সুষম ও উদ্ভিজ্জভিত্তিক খাবারের অভ্যাস গড়ে তোলা যায়, তাহলে বয়সজনিত নানা জটিলতা অনেকটাই কমে যায়।
২০২৫ সালের মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সাময়িকী ‘নেচার মেডিসিন’-এ প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ৭০ বছর বা তার বেশি বয়সী সুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে যারা মধ্যবয়সে উদ্ভিজ্জ-ভিত্তিক সুষম খাদ্য মেনে চলেছেন, তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম।
গবেষণার আওতায় রাখা হয় ৩৯ থেকে ৬৯ বছর বয়সী ১ লাখ ৫ হাজার সুস্থ অংশগ্রহণকারীকে। তাদের খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্যগত অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয় দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে। গবেষণায় মূলত দেখা হয়, মধ্যবয়সের খাদ্যাভ্যাস কীভাবে তাদের বার্ধক্যে গিয়ে প্রভাব ফেলেছে।
গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের একটি স্কোর দেন ‘অল্টারনেটিভ হেলদি ইটিং ইনডেক্স’ (AHEI) ভিত্তিতে, যা হার্ভার্ড কর্তৃক উদ্ভাবিত একটি নির্ভরযোগ্য খাদ্যমান সূচক।
হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিংয়ের তথ্যমতে, যাঁদের স্কোর সবচেয়ে বেশি ছিল, তাঁদের মধ্যে—
৭০ বছর বয়সে সুস্থ থাকার সম্ভাবনা ছিল ৮৬ শতাংশ পর্যন্ত
৭৫ বছর বয়সে পৌঁছেও তাঁদের সুস্থ থাকার সম্ভাবনা বেড়েছে ২.২ গুণ
এই সাত খাবার বেশি করে খেতে হবে
হার্ভার্ডের গবেষকরা জানিয়েছেন, দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতা ও শক্তিশালী বার্ধক্যের জন্য খাদ্যতালিকায় যেসব উপাদান বেশি রাখা প্রয়োজন:
১. ফলমূল
২. সবজি
৩. গোটা শস্য (যা পরিশোধিত নয়)
৪. লেগিউম—যেমন মটর, ছোলা, মসুর
৫. বাদাম
৬. অসম্পৃক্ত স্নেহ পদার্থ (যেমন: অলিভ অয়েল, মাছের তেল)
৭. লো-ফ্যাট দুগ্ধজাত খাবার (পরিমিত মাত্রায়)
এই পাঁচ খাবার কমাতে হবে কিংবা বাদ দিতে হবে
১. চিনিযুক্ত পানীয়
২. লাল মাংস
৩. ট্রান্স ফ্যাট (যেমন: ফাস্টফুড, মার্জারিন)
৪. অতিরিক্ত লবণ
৫. প্রক্রিয়াজাত মাংস (যেমন: সসেজ, সালামি)
গবেষণাপত্রে হার্ভার্ডের গবেষকরা বলেন, “উদ্ভিজ্জভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস হলো সুস্থতার অন্যতম চাবিকাঠি। এর সঙ্গে পরিমিত প্রাণিজ খাবার যোগ করা যেতে পারে, তবে সেগুলোর মাত্রা বুঝেশুনে নির্ধারণ করা উচিত। ভবিষ্যতের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এই পথেই গড়ে উঠবে।”
সুস্থ বার্ধক্য ও দীর্ঘজীবনের লক্ষ্য অর্জনে কেবল শরীরচর্চা বা ওষুধ নয়, প্রয়োজন সময়োপযোগী ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস। হার্ভার্ডের দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা সেই বার্তাই আরও একবার সুস্পষ্ট করে দিল—“খাদ্যই হোক ওষুধ।”