স্ক্রিনের দিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকিয়ে থাকলে চোখের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে

বর্তমান ডিজিটাল যুগে প্রায় সব বয়সের মানুষ দৈনন্দিন জীবনের বড় একটি অংশ কাটায় মোবাইল, ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের স্ক্রিনের সামনে। কাজের প্রয়োজনে হোক বা বিনোদনের জন্য—স্ক্রিনে একটানা তাকিয়ে থাকার অভ্যাস এখন অনেকের। তবে দীর্ঘ সময় স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার এই অভ্যাস আমাদের চোখের স্বাস্থ্য ও দৃষ্টিশক্তির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
চোখের চিকিৎসকদের মতে, ফোন বা কম্পিউটারের অতিরিক্ত ব্যবহারে অনেকেই ভোগেন কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোমে। এতে চোখ জ্বালা করা, শুষ্ক হওয়া, ব্যথা এবং মাথাব্যথার মতো উপসর্গ দেখা যায়। যারা নিয়মিত দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকেন, তাদের মধ্যে ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ এই সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন।
অতিরিক্ত স্ক্রিন ব্যবহারে চোখের পলক ফেলার হার প্রায় ৮০ শতাংশ কমে যায়, যা চোখের স্বাভাবিক আর্দ্রতা নষ্ট করে। এর ফলে ড্রাই আই ডিজিজ বা শুষ্ক চোখের সমস্যাও দেখা দেয়। তাছাড়া, ডিভাইসের নীল আলো সরাসরি চোখের রেটিনায় পৌঁছে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন বা দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঝুঁকি বাড়ায়।
বিশেষজ্ঞরা জানান, শিশুরা এখন কম বয়স থেকেই স্মার্টফোন ও ট্যাব ব্যবহার শুরু করছে, যা তাদের চোখের বিকাশের জন্য বিপজ্জনক। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু দীর্ঘ সময় স্ক্রিন ব্যবহার করছে, তাদের মধ্যে মায়োপিয়া বা দূরের জিনিস অস্পষ্ট দেখা রোগের হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে প্রায় ৫ বিলিয়ন মানুষ মায়োপিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উচ্চ মায়োপিয়া থাকলে ভবিষ্যতে ছানি, গ্লুকোমা, রেটিনা ছিঁড়ে যাওয়া ও অন্ধত্বের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
চোখের ক্ষতি কমাতে যা করতে হবে:
১. চিকিৎসক ও গবেষকরা স্ক্রিন ব্যবহারকারী সবাইকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন:
২. ২০-২০-২০ নিয়ম অনুসরণ করুন: প্রতি ২০ মিনিট পর পর ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরে তাকান। এটি চোখকে বিশ্রাম দেয় এবং দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করে।
৩. স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা কমিয়ে দিন: মোবাইল ও কম্পিউটারে আই প্রোটেকশন মোড বা নাইট মোড চালু রাখুন। প্রয়োজনে নীল আলো ব্লক করে এমন লেন্স বা স্ক্রিন ফিল্টার ব্যবহার করুন।
৪. চোখের পলক ফেলায় স্বাভাবিকতা বজায় রাখুন: চোখকে আর্দ্র রাখতে প্রতিনিয়ত পলক ফেলা জরুরি।
৫. ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন দেবেন না: চোখের পূর্ণ বিকাশে সময় লাগে, তাই শিশুদের দৃষ্টিশক্তি রক্ষায় স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করুন।
৬. ‘মিড ডিসট্যান্স ভিউ’ উপযোগী চশমা ব্যবহার করুন: দীর্ঘ সময় স্ক্রিন ব্যবহারকারীদের জন্য বিশেষ প্রগ্রেসিভ লেন্স কার্যকর হতে পারে।
৭. নতুন প্রযুক্তির মনিটর ব্যবহার করুন: পুরোনো বা নিম্নমানের স্ক্রিনে নীল আলো বেশি থাকে, যা চোখের জন্য ক্ষতিকর।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ: স্ক্রিন ছাড়া জীবন এখন কল্পনা করা কঠিন। তাই একে পুরোপুরি বাদ না দিয়ে, সচেতন ব্যবহার ও নিয়মিত চোখের পরীক্ষা—এই দুইটি অভ্যাস আপনাকে চোখের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।