শুধু শাসন নয়, সন্তানের বন্ধু হন—ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে বদল আনুন অভিভাবকত্বে

আপনার সন্তান পড়াশোনায় মন দিচ্ছে না, দুষ্টুমি করছে—তাই বলে সারাক্ষণ বকাঝকা করবেন? “এটা করো না, ওটা করো না, এখানে যেও না, ওখানে যেও না”—এভাবে নিয়ম আর শাসনের ঘেরাটোপে রেখে আদৌ কি আপনি তাকে একজন দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারছেন?
মনোবিদদের মতে, এই প্রাচীন ধ্যানধারণা বদলানোর সময় এসেছে। আধুনিক প্যারেন্টিংয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে শাসনের বদলে সহানুভূতি ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর। সন্তানের বয়স যতই কম হোক না কেন, তারও নিজস্ব মতামত, অনুভব ও শোনার অধিকার রয়েছে। তাই শুধু আদেশ নয়, এখন দরকার বোঝাপড়ার।
সন্তানের বন্ধু হতে চাইলে কী করবেন?
১. শুনুন, বুঝুন, সহানুভূতি দেখান
সন্তান আপনাকে কিছু বলতে চাইলে মনোযোগ দিয়ে শুনুন। নিজেকে চাপিয়ে দেবেন না। সময় নিয়ে বোঝান। মনে রাখবেন, আপনি তার জীবনের প্রথম শিক্ষক এবং সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।
২. আবেগ বুঝুন, প্রতিক্রিয়ায় নয়—ভালবাসায় জিতুন
শিশুরা আবেগ সামলাতে পারে না। আনন্দ, কান্না, রাগ—সবই তীব্রভাবে প্রকাশ করে। আপনি উত্তরে রেগে গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। বরং আদর করে, জড়িয়ে ধরে তাকে শান্ত করুন। এতে সে বুঝবে, আপনি সবসময় তার পাশে আছেন।
৩. তুলনা নয়, উৎসাহ দিন নিজস্ব গুণে
প্রত্যেক শিশুরই কিছু না কিছু গুণ থাকে। কেউ পড়াশোনায় ভালো, কেউ গান গায়, কেউ চমৎকার আঁকে। অন্যদের সঙ্গে তুলনা করে নিজের সন্তানের আত্মবিশ্বাস ভেঙে ফেলবেন না। এতে সে নিজেকে ছোট ভাবতে শিখবে।
৪. কিশোর সন্তানের ক্ষেত্রে নজর, কিন্তু নয় নজরদারি
কিশোর বয়সে সন্তানদের চলাফেরা ও বন্ধুদের দিকে নজর রাখা জরুরি। কিন্তু প্রতিনিয়ত নাক গলাবেন না। এতে সে বিরক্ত হবে, গোপনীয়তা তৈরি হবে। বরং বোঝান—তোমার কাজ যেন তোমার ক্ষতি না করে কিংবা পরিবারের সম্মানহানি না হয়।
৫. রুটিন করুন—তবে একসঙ্গে
শুধু সন্তানকে নয়, আপনাকেও রুটিনে চলতে হবে। তার পড়াশোনা, খেলাধুলা, গল্প—সবকিছুতে সময় দিন। এতে সে আপনাকে নিজের অংশ ভাববে, আলাদা কেউ নয়।
শাসনের চেয়ে ভালোবাসা ও বোঝাপড়া অনেক বেশি কার্যকর। সন্তানকে বোঝার চেষ্টা করুন, ভালোবাসুন। বন্ধুর মতো পাশে থাকুন। তাহলেই সে হয়ে উঠবে একজন দায়িত্বশীল, আত্মবিশ্বাসী ও সুস্থ মনের মানুষ।