প্রস্রাব চেপে রাখলে হতে পারে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি

কাজের ব্যস্ততা, উপযুক্ত পরিবেশের অভাব কিংবা অযত্নের কারণে অনেকেই দিনের বেলায় দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাবের বেগ চেপে রাখেন। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, এই অভ্যাস আমাদের শরীরের জন্য হতে পারে মারাত্মক ক্ষতির কারণ। নিয়মিত এমনটা হলে মূত্রথলি, কিডনি ও মূত্রনালিতে দেখা দিতে পারে জটিল স্বাস্থ্যসমস্যা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানবদেহের মূত্রথলি একসঙ্গে ৩০০ থেকে ৫০০ মিলিলিটার পর্যন্ত মূত্র ধারণ করতে পারে। কিন্তু সঠিক সময়ে তা নির্গত না হলে একাধিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
চলুন জেনে নিই দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখলে কী কী ঝুঁকি তৈরি হয়—
১. তলপেটে ব্যথা ও অস্বস্তি
প্রস্রাব জমে থাকলে তলপেটে চাপ তৈরি হয়, যা অস্বস্তি ও ব্যথার জন্ম দেয়। পরিস্থিতি জটিল হলে সেই ব্যথা মাথায়ও ছড়িয়ে পড়ে।
২. মূত্রথলির পেশি দুর্বল হয়ে পড়া
প্রস্রাব চেপে রাখলে মূত্রথলির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। দীর্ঘদিন এমন চলতে থাকলে এর পেশিগুলো দুর্বল হয়ে যায়। ফলে মূত্র পুরোপুরি নিঃসৃত হয় না এবং ক্যাথেটার ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দেয়।
৩. মূত্রনালিতে সংক্রমণ (UTI)
দীর্ঘ সময় ধরে মূত্র জমে থাকলে সেখানে ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হয়, যা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) তৈরি করতে পারে। এটি নিরাময় না হলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে কিডনিতেও।
৪. কিডনির ক্ষতি
কিডনি শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দেয় মূত্রের মাধ্যমে। কিন্তু প্রস্রাব চেপে রাখলে সেই তরল আবার কিডনির দিকেই ফিরে যেতে পারে, যা কিডনি বিকলের ঝুঁকি বাড়ায়।
৫. মূত্রথলিতে পাথর
মূত্রে থাকা খনিজ উপাদান যদি দীর্ঘক্ষণ জমে থাকে, তবে তা শক্ত হয়ে পাথরে পরিণত হতে পারে। এই পাথর মূত্রথলিতে জমে গিয়ে আরও জটিলতা তৈরি করতে পারে।
কী করবেন?
চিকিৎসকদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতি তিন থেকে চার ঘণ্টা অন্তর প্রস্রাব করা উচিত।
যদি কেউ দিনে ৪ লিটার পানি পান করেন, তাহলে তার গড় প্রস্রাবের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ থেকে ৮ বার।
প্রতি দিনে একজন ব্যক্তির শরীরে গড়ে দেড় থেকে ২ লিটার পর্যন্ত মূত্র তৈরি হয়।
পরামর্শ:
দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখার অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি। কর্মস্থলে বা বাইরে প্রয়োজনীয় স্যানিটারি ব্যবস্থা না থাকলেও সচেতনতার মাধ্যমে শরীরকে সুরক্ষায় রাখা সম্ভব। মনে রাখতে হবে—মূত্রত্যাগ শুধু আরাম নয়, এটি শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া।
"আপনার শরীরই আপনার প্রকৃত সহায়ক। তাই প্রয়োজনে সময় নিয়ে হলেও তাকে তার স্বাভাবিক কার্যক্রম সম্পাদনের সুযোগ দিন।"