হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা ‘অ্যারিথমিয়া’: কারণ, লক্ষণ ও করণীয়

হৃদরোগের বিভিন্ন জটিলতার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো ‘অ্যারিথমিয়া’, যা মূলত হৃদপিণ্ডের অনিয়মিত স্পন্দনের ফলে সৃষ্টি হয়। অনেকেই এই সমস্যার সঙ্গে অবহিত না থাকায় উপসর্গ উপেক্ষা করেন, যা পরবর্তীতে প্রাণঘাতী জটিলতায় রূপ নিতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যারিথমিয়া হতে পারে মানসিক চাপ, শারীরিক অস্বস্থি কিংবা খনিজ ও ভিটামিনের ঘাটতির ফলেও। পারিপার্শ্বিক অস্থিরতা যেমন উদ্বেগ-অবসাদের জন্ম দেয়, তেমনই শরীরে ম্যাগনেশিয়াম বা পটাশিয়ামের অভাবও হৃদস্পন্দনের স্বাভাবিকতায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
কী এই ‘অ্যারিথমিয়া’?
সাধারণত একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হৃদস্পন্দন প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বার হয়। এ গতি যদি এর চেয়ে কম হয়, তাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলা হয় ব্র্যাডিকার্ডিয়া। আর যদি ১০০ এর বেশি হয়, সেটিকে বলা হয় টাকাইকার্ডিয়া। এ দুটির বাইরে যদি হৃদপিণ্ডের স্পন্দনে ছন্দপতন ঘটে, তাকে বলা হয় ‘অ্যারিথমিয়া’।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের এক গবেষণা অনুযায়ী, হৃদযন্ত্রের উপরের দুটি প্রকোষ্ঠ (অ্যাট্রিয়া) এবং নিচের দুটি প্রকোষ্ঠ (ভেন্ট্রিকল) একসঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করে। যখন এই সমন্বয় নষ্ট হয়, তখনই অনিয়মিত হৃদস্পন্দন দেখা দেয়।
‘অ্যারিথমিয়া’ হওয়ার সম্ভাব্য কারণসমূহ
১. হার্ট ব্লক
২. উচ্চ রক্তচাপ
৩. থাইরয়েডজনিত সমস্যা
৪. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
৫. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
৬. অতিরিক্ত ক্যাফেইন, অ্যালকোহল ও ধূমপান
৭. ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা
৮. ফুসফুসের রোগ
৯. সাইনাস নোডের কর্মহীনতা
১০. শরীরে ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি
লক্ষণসমূহ
১. ‘অ্যারিথমিয়া’ রোগে আক্রান্ত হলে নিচের উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে:
২. হৃদস্পন্দন দ্রুত বা অত্যন্ত ধীর হয়ে যাওয়া
৩. হঠাৎ করে হৃদস্পন্দনের ঝাঁকুনি অনুভব করা
৪. মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা অনুভব
৫. বুকে চাপ বা ব্যথা
৬. শ্বাসকষ্ট
৭. অতিরিক্ত ঘাম
৮. বুক ধড়ফড় করা বা অস্বস্তি
কীভাবে নির্ণয় করা হয়?
ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (EKG) বা হোলটার মনিটরিং এর মাধ্যমে চিকিৎসকরা সহজেই অ্যারিথমিয়া শনাক্ত করতে পারেন।
‘অ্যারিথমিয়া’ একটি সম্ভাব্য জটিল রোগ। তাই নিচের পদক্ষেপগুলো মেনে চললে ঝুঁকি কমানো যায়:
১. উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
২. ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করুন
৩. অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন
৪. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
৫. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
৬. মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন বা রিল্যাক্সেশন চর্চা করুন
৭. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন (বিশেষ করে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার)
অ্যারিথমিয়া যেমন একজন মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারে, তেমনি অবহেলা করলে এটি পরিণত হতে পারে হৃদরোগজনিত মারাত্মক জটিলতায়। সময়মতো সচেতনতা, সঠিক চিকিৎসা এবং জীবনশৈলীর পরিবর্তনই এ রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রধান উপায়।