‘কাঙ্খিত বাংলাদেশ এখনও আসেনি, তবে লড়াই চলবে’ — সারজিস আলম

‘স্বৈরাচার পতনের এক বছর পরও কাঙ্খিত বাংলাদেশ আসেনি’— এমন মন্তব্য করেছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
পোস্টে তিনি লিখেছেন, “৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে ৫ আগস্ট ২০২৫ — এক বছরের মাথায় আমরা এখনো আমাদের কাঙ্খিত বাংলাদেশ পাইনি। হয়তো একবছরে পুরোটা পাওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু যতটুকু সম্ভব ছিল, তাও আমরা পাইনি।”
সারজিস আলম বলেন, এই একবছরের প্রাপ্তি কম থাকার জন্য কাউকে এককভাবে দায়ী করা যায় না। বরং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো— রাজনীতিবিদ, আমলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মিডিয়া, ব্যবসায়ী, শ্রমজীবী মানুষ ও সাধারণ জনগণের সম্মিলিত ভূমিকা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তার ভাষায়, “একটি কাঙ্খিত রাষ্ট্রের জন্য সব পক্ষের একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়া দরকার। এক পক্ষ সহযোগিতা না করলে অন্য পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি অনেকটা চক্রের মতো।”
সারজিস আলম মনে করেন, শেখ হাসিনার ব্যক্তি পতন হলেও তার তৈরি করা ‘নষ্ট ও করাপ্টেড সিস্টেম’ এখনো রয়ে গেছে মানুষের মন ও ব্যবস্থার ভেতরে। তিনি লেখেন, “ব্যক্তি হাসিনা পালিয়েছে, কিন্তু তার তৈরি করা অসুস্থ চিন্তা ও অপকর্ম এখনো সমাজে বিস্তৃত। এই সিস্টেম, চিন্তা আর চরিত্রের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হবে প্রতিনিয়ত।”
রিকশাচালক থেকে রাজনীতিবিদ—সবাই নিজ নিজ অবস্থানে অন্যায় করলে কাঙ্খিত রাষ্ট্র আসবে না বলে মনে করেন সারজিস আলম। তার মতে, “যার যতটুকু সামর্থ্য, সে ততটুকু ক্ষমতার অপব্যবহার করে। আমাদের লড়াইটা ইন্ডিভিজ্যুয়াল জায়গা থেকে। প্রত্যেককে নিজের কাজটা ঠিকভাবে করতে হবে।”
তিনি সতর্ক করেন, “করাপটেড সিস্টেমের পৃষ্ঠপোষক কিছু কালো হাত বিভাজন তৈরির চেষ্টা করবে, বিশ্বাস ভাঙবে, মিডিয়া প্রোপাগান্ডা চালাবে—তবে দমে যাওয়ার সুযোগ নেই।”
আন্দোলনে নিহত ও আহতদের কথা স্মরণ করে সারজিস আলম বলেন, “যারা জীবন দিয়েছেন, যাদের শরীরে এখনো গুলির চিহ্ন আছে, তাদের ত্যাগ কোনোভাবেই বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। ৫ আগস্ট আমাদের কাছে সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে আমানত। এই আমানতের খেয়ানত না করার প্রতিজ্ঞাই আমাদের কাঙ্খিত বাংলাদেশ এনে দেবে।”
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, “যে প্রজন্ম ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটাতে পেরেছে, তাদের সামনে আর কেউ পার পাবে না। ইনশাআল্লাহ আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সেই বাংলাদেশই গড়ে তুলবো।”
শেষে তিনি ‘ইনক্বিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগানে তার বার্তা শেষ করেন।