বিএনপির সম্মেলন পন্ড করতে পরিকল্পিতভাবে সহিংসতা তৈরির অভিযোগ

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার মল্লিকেরবের ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনকে পন্ড করার জন্য পরিকল্পিতভাবে সহিংসতা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সাবেক ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান মিঠু। সোমবার বিকেলে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। এসময়, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও আসন্ন সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী আব্দুল আলিম হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এ্যাড. হুমায়ুন কবিরসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাগেরহাট জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মেহেদী হাসান মিঠু বলেন, রামপাল উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়নে বিএনপির সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে মল্লিকেরবের ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে। এখানে আমার বাবা বর্তমান ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও আসন্ন সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী আব্দুল আলিম হাওলাদার, তার প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এ্যাড. হুমায়ুন কবিরসহ যারা রয়েছেন, তাদের জনপ্রিয়তা অনেক। আসন্ন সম্মেলনে তাদের বিজয় সুনিশ্চিত জেনে, প্রতিপক্ষ প্রার্থী সাজারুল ইসলম সাজু ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শামীম হাসান পলক সম্মেলন বানচালের চেষ্টা করছেন। এর প্রচেষ্টা হিসেবে গতকাল রোববার বিকেলে তারা সন্নাসী বাজার এলাকায় আমার বসতবাড়ির সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে। আমরা ভেবেছিলাম যে, তারা শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করবে। কিন্তু সাবেক যুবদল নেতা জাহিদুল ইসলাম হাওলাদার ও বিএনপি নেতা ফিরোজ শেখের নেতৃত্বে দুই শতাধিক লোক আমাদের বাড়ির গেট ভেঙ্গে ফেলে এবং বাড়িঘরে হামলা করে।
এক পর্যায়ে তারা জানতে পারে আমি বাড়িতে আছি। এটা জানার পরে তারা আরও বেশি আগ্রাসি আক্রমন করে। তাদের মূল লক্ষ ছিল আমাকে মেরে ফেলা ও আমার গাড়ি ভাংচুর করে পুড়িয়ে ফেলা। এ উদ্দেশ্যে তারা পেট্রোল ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এসেছিল। তারা আমাদের ঘরের গেট, গ্লাসসহ সবকিছু ভেঙ্গে ফেলেছে। আমাদের কয়েকটি দোকান ও ইউনিয়ন বিএনপির অফিস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি ভাংচুর করে। তাদের হামলায় আমাদের অন্তত ৩০জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন, তাদের অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীণ রয়েছেন। পরে আমি পুলিশ ও সেনা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় প্রাণ বাঁচাতে সন্নাসী বাজার থেকে বাগেরহাট শহরে চলে আসি।
মেহেদী আরও বলেন, এখনও আমাদের পুরো পরিবার ও আমার বাবার কর্মীরা মারত্মক ঝুকিতে রয়েছেন। সোমবার সকালে এবং বিকেলেও বাজারের কয়েকটি দোকান ভাংচুর এবং লুট করেছে জাহিদুল ইসলামের লোকজন। আমাদের রান্না ঘর ভেঙ্গে ফেলেছে, বাজারের সবাইকে আমাদের বাড়িতে কোন মালামাল বিক্রি করতে নিষেধ করেছে।
মেহেদী হাসান মিঠু বলেন, এই সহিংসতা ও সংকট তৈরির প্রচেষ্টা শুধু ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে নয়। এটা পুরো উপজেলা বিএনপির নেতৃত্বের বিষয়। উপজেলা বিএনপির বর্তমান আহবায়ক হাফিজুর রহমান তুহিনের কর্মীরা ৮টি ইউনিয়নে বিজয় লাভ করেছেন। অপর দিকে হাফিজুর রহমান তুহিনের প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী বর্তমান উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলামের লোকজন মাত্র একটি ইউনিয়নে বিজয় লাভ করেছেন। মূলত মল্লিকের বের ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী সাজারুল ইসলাম সাজু, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শামীম হাসান পলক ও সাবেক যুবদল নেতা জাহিদুল ইসলাম হাওলাদারকে দিয়ে মল্লিকেরবের ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলন বানচাল করিয়ে, উপজেলা বিএনপির সম্মেলন স্থগিত করার উদ্দেশ্যে এই সংহিংসা করছে।
আমার বাবা ও আমার পরিবার শান্তিপ্রিয় রাজনীতিতে বিশ্বাসি। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি ও জেলা কমিটির কাছে আমার আবেদন উক্ত ঘটনার সঠিক তদন্তপূর্বক সহিংসতার ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। এছাড়া এলাকার মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানাই।
উল্লেখ, বেশকিছুদিন ধরে মল্লিকেরবের ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলন নিয়ে প্রতিদ্বন্দী সভাপতি প্রার্থী আব্দুল আলিম হাওলাদার ও সাজারুল ইসলাম সাজুর লোকদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। কয়েকবার দুই পক্ষের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনাও ঘটেছে। সব শেষে শনিবার রাতে বেতবুনিয়া এলাকায় বেতবুনিয়া পাকা রাস্তার মাথায় প্রতিপক্ষের লোকদের হামলায় মল্লিকেরবের ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শামীম হাসান পলকসহ ১১জন আহত হয়। মারধররের প্রতিবাদ ও হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে রোবরার (০৩ আগস্ট) বিকেলে আব্দুল আলিমের প্রতিদ্বন্দী সভাপতি প্রার্থী সাজারুল ইসলাম সাজু ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শামীম হাসান পলকের লোকজন পুলিশের অনুমতিতে মানববন্ধনের আয়োজন করেন। মানববন্ধনের জন্য জড়ো হয়। আব্দুল আলিম হাওলাদারের বাড়িতে হামলা করে। উভয় পক্ষের লোকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে অণ্তত ৫০ জন আহত হয়। সাজারুল ইসলাম সাজু ও জাহিদুল হাওলাদারের লোকজন আব্দুল আলিমের বসত বাড়ি, সন্নাসী বাজারের ২০টি দোকান ভাংচুর করেন।