যুবলীগের প্রভাব খাটিয়ে জাল সনদে শিক্ষকতার অভিযোগ

রাজশাহীর নওহাটা সরকারি ডিগ্রি কলেজের একজন প্রভাষক জাল সনদ দিয়ে চাকরি নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে অভিযুক্ত শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে কলেজের সামনে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
আব্দুর রব নামের ওই শিক্ষক ২০১৫ সালে যোগ দেন প্রভাষক হিসেবে। তিনি ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, রাজশাহী জেলা যুবলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে আব্দুর রব প্রভাব খাটিয়ে জাল সনদে চাকরি নেন। আওয়ামী পতনের পর তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে কয়েকটি মামলাও হয়েছে। তিনি সম্প্রতি গ্রেফতারও হয়েছিলেন। গ্রেফতারের ঘটনায় নিয়ম অনুযায়ী বরখাস্ত হওয়ার কথা থাকলেও তা না করে উল্টো তার জামিনে কলেজের অধ্যক্ষ সহায়তা করেছেন।
জানা গেছে, প্রভাষক আব্দুর রব ২০১৫ সালে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি এমএ সনদ দিয়ে নওহাটা ডিগ্রি কলেজে যোগ দেন। অথচ, দারুল ইহসানের সনদ সরকার অবৈধ ঘোষণা করে রেখেছে। তার দাখিল করা আলিম পাসের সনদেও জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে। ২০০৬ সালে ১.৯২ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হলেও তিনি সনদ টেম্পারিং করে পাসের বছর ২০০৮ এবং জিপিএ ৩.৬৭ দেখান।
প্রভাষক আব্দুর রবের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষায় লিখিত পর্বে সর্বনিম্ন নম্বর পেলেও তৎকালীন এমপি আয়েন উদ্দিনের সুপারিশে তাকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘যে শিক্ষক নিজেই প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত, তার কাছে আমরা নৈতিকতার শিক্ষা কীভাবে পাব। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পবিত্রতা রক্ষায় আমরা তার অপসারণ চাই।’
একজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা আমাদের সন্তানদের একটি ভালো প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েছি জ্ঞান অর্জনের জন্য। কিন্তু, যদি শিক্ষকের বিরুদ্ধেই এমন গুরুতর অভিযোগ থাকে তাহলে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। কর্তৃপক্ষ কেন এখনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না, সেটাই আমাদের প্রশ্ন।’
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া আরেক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতি ও মাদকসহ একাধিক মামলার অভিযোগ, তার কাছে আমাদের সন্তানেরা কী শিখবে? প্রতিষ্ঠান প্রধানও যদি তাকে রক্ষা করতে চান, তাহলে আমরা কোথায় যাব?’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা বিক্ষোভের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে হওয়া মামলায় সম্প্রতি আব্দুর রব গ্রেফতার হন। সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী, ফৌজদারি মামলায় কোনো কর্মচারী গ্রেফতার হলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার নিয়ম। কিন্তু, নওহাটা কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ মোস্তফা জামান তা না করে উল্টো রবের জামিনের জন্য কলেজ থেকে একটি প্রত্যয়নপত্র দেন। ওই প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতেই রব জামিনে মুক্তি পান। অধ্যক্ষের এমন পক্ষপাতমূলক আচরণে কলেজের অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, অধ্যক্ষ দলীয় প্রভাবের কারণে অভিযুক্ত রবকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। রবের বিরুদ্ধে মোহনপুর থানায় আরও পাঁচটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এর আগে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনি দুবার গ্রেফতার হয়ে জেলও খেটেছিলেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত প্রভাষক আব্দুর রবের ব্যবহৃত নাম্বারে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ মোস্তফা জামান বলেন, ‘সনদ জালিয়াতি আছে কি না তা তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।’
