ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা: আসন্ন বিশ্বকাপে ইরানের অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা

টানা ১২ দিন বিশ্বের নজর ছিল ইরান ও ইসরায়েলের সরাসরি সংঘাতের দিকে। এই উত্তেজনার মধ্যেই উদ্বেগ ছড়িয়েছিল, পরিস্থিতি কি বড় পরিসরের যুদ্ধে রূপ নেবে? যুক্তরাষ্ট্র যদি সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে—তাহলে সেটা রূপ নিতে পারত বিশ্বব্যাপী সংঘাতে। শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে, যার ফলে আপাতত কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে মধ্যপ্রাচ্যে।
তবে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনার ধাক্কা পৌঁছেছে ক্রীড়াঙ্গনেও। প্রশ্ন উঠছে—২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপে ইরানের অংশগ্রহণ নিয়ে। আগামী বছরের আসর বসবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে। আয়োজক দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি ম্যাচ আয়োজন করবে। এবং ইতিমধ্যে বিশ্বকাপে নিজেদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে ইরান।
রাজনৈতিক জটিলতা বনাম ক্রীড়াগত বাস্তবতা
ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দেশের রাজনৈতিক অবস্থানকে কেন্দ্র করে তার বিশ্বকাপে অংশগ্রহণে বাধা দেওয়া হয় না। তেমন কোনো বিধিনিষেধ না থাকলেও, যুক্তরাষ্ট্রে ইরানিদের প্রবেশে যে ভিসা ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা ম্যাচ আয়োজন ও দল পাঠানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র সরকার স্পষ্ট করেছে, বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ ও পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশেষ ব্যতিক্রম রাখা হবে। সেক্ষেত্রে আইনি বাধা খুব একটা থাকবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
গ্রুপ ড্রই হয়ে উঠতে পারে কৌশলগত সমাধান?
বিশ্বকাপে গ্রুপ ‘এ’ তে পড়লে ইরান তাদের সব গ্রুপ ম্যাচ মেক্সিকোতেই খেলতে পারবে। এমনকি যদি তারা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়, তবে শেষ ৩২ ও শেষ ১৬ রাউন্ডও মেক্সিকোতে খেলতে পারবে।
কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাধ্যতামূলকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে হবে—যদি না বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ফিফা এখনো এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি, যদিও গার্ডিয়ান জানিয়েছে, তারা বিষয়টি নিয়ে ফিফার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ফিফা ড্র ও লজিস্টিকস বিষয়ে এখনো অবস্থান জানায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ডিসেম্বরে গ্রুপ ড্রয়ের আগেই তারা সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে।
পূর্ব অভিজ্ঞতা কী বলছে?
২০২২ সালে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেন আগ্রাসনের পর উয়েফা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইউক্রেন ও বেলারুশকে একই গ্রুপে রাখা যাবে না। তখন উয়েফার প্রতিযোগিতাগুলো থেকে রাশিয়াকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়।
ফিফাও সেই রোডম্যাপ অনুসরণ করতে পারে, যদিও ইরানের বিরুদ্ধে এখনো কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
বিশ্বকাপ সংগঠক কমিটিতে রয়েছে ইরান, কানাডা ও মেক্সিকোর প্রতিনিধি এবং এ কমিটির সভাপতি উয়েফা প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার সেফেরিন, যিনি ইতিপূর্বে জটিল ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক ক্রীড়া সমাধান দিয়েছেন।
উপসংহার: খেলাধুলা ও কূটনীতি কি আলাদা রাখা সম্ভব?
সরাসরি যুদ্ধবিরতির পরও, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক অনিশ্চিত। এই বাস্তবতায় প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, ক্রীড়ার নিরপেক্ষতা কতদূর রক্ষা করতে পারবে ফিফা?
আর ইরান কি সত্যিই যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখতে পারবে—তা নির্ভর করছে রাজনৈতিক সমঝোতা ও কূটনৈতিক ছাড়ের ওপর।
বিশ্বকাপের ড্র ও ফিফার চূড়ান্ত অবস্থান প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ব ফুটবলকেই অপেক্ষা করতে হবে সম্ভাব্য সমাধানের জন্য।
