ঝিনাইদহে জাল সনদে চাকরি করছেন ১০ শিক্ষক

ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাল সনদে চাকরী করা ১০ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনো প্রশাসনিক বা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) চাকরিচ্যুতি, অর্থ ফেরত, অবসর সুবিধা, কল্যাণ ট্রাস্ট বাতিল, ফৌজদারি মামলা এবং নিয়োগে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিল।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এস এম মোসলেম উদ্দীন সাক্ষরিত ৯৩৫ নং স্মারকের এক চিঠি সুত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলায় ১০ শিক্ষক জাল সনদে চাকরী করার পর তাদের এমপিও সাময়িকভাবে স্থগিত করা হলেও এখনও তারা স্বপদে বহাল থেকে ক্লাস পরিচালনা করে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করে অন্য স্কুলে চাকরী নিয়ে চলে গেছেন।
গত ৪ জুন মাউশি’র ওই চিঠিতে বলা হয়, সারা দেশে প্রমাণিত ৬৭৮ জন জাল সনদধারী শিক্ষক-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আর্থিক ব্যবস্থা গ্রহণের কি নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে তা অত্র চিঠি প্রাপ্তির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে জানাতে বলা হলেও ঝিনাইদহ জেলার এই ১০ জনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করেনি।
অভিযোগ উঠেছে, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার যোগসাজশে এ সকল শিক্ষক এখনো শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন না করে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও স্কুলের সভাপতিরা নীরব দর্শকের ভুমিকা পালন করনে।
চিঠিতে জাল সনদধারী শিক্ষকদের কাছ থেকে ৩৩ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৩ টাকা আদায়ে কি পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে তাও জানাতে বলা হয়। কিন্তু ঝিনাইদহ শিক্ষা বিভাগ এ বিষয়ে একেবারেই নিশ্চুপ রয়েছে।
জেলায় জাল সনদধারী ভুয়া শিক্ষকরা হলেন, হরিনাকুন্ডু পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা) মঈন উদ্দিন, ঝিনাইদহ শিশুকুঞ্জ ফুল এন্ড কলেজ সহকারী শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম) তপন কুমার বিশ্বাস। ডেফলবাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা) জাহিদুল ইসলাম, বংকিরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কৃষি) মামুন অর রশিদ, কালিগঞ্জ উপজেলার নলডাঙ্গা ভুষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (সমাজ) হাজেরা খাতুন, কোটচাঁদপুর উপজেলার বহরমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (ইসলাম ধর্ম) ড. মাহফুজা খানম, একই স্কুলের কম্পিউটার শিক্ষক শামীমা আক্তার, সদর উপজেলার বাসুদেবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুর রহমান, লালন একাডেমী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) রাজিয়া খাতুন ও মহেশপুর উপজেলার গুড়দা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) মোস্তাফিজুর রহমান।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, অভিযুক্ত ১০ শিক্ষক-কর্মচারীরা বছরের পর বছর অবৈধভাবে বেতন-ভাতা নিয়েছেন। কিন্তু এই অর্থ এখনো সরকারি কোষাগাজেমা দেওয়া হয়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, এইসব জাল সনদধারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুতি, অর্থ ফেরত, অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট বাতিল, ফৌজদারি মামলা এবং নিয়োগে জড়িতদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও কোনো ক্ষেত্রেই তা বাস্তবায়ন হয়নি।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার লুৎফর রহমান বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান ও স্কুল কমিটির সভাপতির কাছে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পাঠিয়েছি। স্কুল কমিটি ও প্রধান শিক্ষক জাল সনদধারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। এ বিষয়ে আমরা কেবল পরামর্শ ও চিঠি লেনদেন করছি মাত্র।