আপত্তিকর ভিডিওর পর প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যা, অভিযোগ ভগ্নিপতির বিরুদ্ধে

ভালোবেসে বিয়ে করেন সুলতানা পারভিন সোহা (২৫) ও প্রবাসী আশরাফুল ইসলাম অনিক (২৮)। বিয়ের পর সুখ-স্বচ্ছন্দে চলছিল তাঁদের নতুন জীবন। এর মধ্যে একটি আপত্তিকর ভিডিও তাঁদের জীবনে আনে চরম দুঃসহ এক বিপর্যয়।
এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার থানায় অভিযুক্ত মোহাম্মদ নাহিন শেখের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগীর পরিবার।
এরআগে, ভয়াবহতায় গত রোববার (৬ এপ্রিল) আত্মহত্যার পথ বেছে নেন সুলতানা পারভিন।
সুলতানা পারভিন লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের সিদ্দিক আলীর মেয়ে, আর একই এলাকার বাসিন্দা জাপানপ্রবাসী আশরাফুল ইসলাম অনিক।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ১০ মাস আগে জাপানপ্রবাসী আশরাফুল ইসলাম অনিকের সঙ্গে সুলতানার বিয়ে হয়। বিয়ের পর অনিক স্ত্রীর ভিসার সব কার্যক্রম শেষ করেন, ঠিক তখনই নেমে আসে অন্ধকার এক ছায়া। গত রোববার নিজ বাড়িতে আত্মহত্যার মধ্য দিয়েই শেষ হয় তাঁর স্বপ্নের পথচলা।
তাঁরা জানান, অনিকের ভগ্নিপতি পর্তুগালপ্রবাসী মোহাম্মদ নাহিন শেখ ওরফে মৃদুল, তাঁদের প্রেমের এই বিয়ে মেনে নেননি। তাই তাঁদের বিচ্ছেদ ঘটাতে তিনিই পরিকল্পিতভাবে এআই ব্যবহার করে সুলতানার ছবি দিয়ে তৈরি করেন একটি আপত্তিকর ভিডিও। সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেন একটি ফেক আইডি থেকে। প্রথমে সুলতানাকে এবং পরে তাঁর স্বামী অনিককেও পাঠানো হয় সেই ভিডিও।
এতে তাঁদের সংসারে শুরু হয় ভুল-বোঝাবুঝি ও মানসিক নির্যাতন। পরবর্তীকালে জানা যায়, ভিডিওটি ভুয়া এবং এর পেছনে ছিলেন নাহিন শেখ। তবে তত দিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। আত্মহত্যার আগে সুলতানা পারভিন তিন পাতার সুইসাইড নোট রেখে গেছেন, যেখানে তিনি পর্তুগালপ্রবাসী নাহিন শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন এবং ন্যায়বিচারের আবেদন জানান।
সুলতানার মা ফিরোজা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়েকে ওরা শেষ করে দিয়েছে, এ কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।’
সুলতানার ভাই নৌবাহিনীর কোস্ট গার্ডে কর্মরত আলিমুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। আমরা ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তার ভেতরে ভেঙে গিয়েছিল। একপর্যায়ে আমাদের সকলের অগোচরে চিরদিনের জন্য চলে গেছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।’
সুলতানার স্বামী আশরাফুল ইসলাম অনিক ভিডিও কলে বলেন, ‘আমি ওকে (সোহা) ভালোবেসে বিয়ে করেছি। সব কাগজপত্র ঠিক করে ওকে জাপানে নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার বোন জামাই মেনে নেয়নি। সে পরিকল্পনা করেই এসব করেছে। আমি আইনি ব্যবস্থা নেব, এ ঘটনার বিচার চাই।’
এ বিষয়ে কথা বলতে অভিযুক্ত প্রবাসী মোহাম্মদ নাহিন শেখ ওরফে মৃদুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আকবর বলেন, ‘এ ঘটনায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা থানায় এসে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের করেছেন। যা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’