ময়মনসিংহে ছাত্রলীগ নেতাসহ এক দিনে তিন মরদেহ উদ্ধার

ময়মনসিংহের তিন উপজেলায় ছাত্রলীগ নেতাসহ তিন যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যা করা হয়েছে নাকি স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
নিহতরা হলেন, ছাত্রলীগ নেতা রুহুল আমিন আকাশ (৩০) নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা থানার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেলায়াতলী গ্রামের বাসিন্দা নওয়াব আলীর ছেলে ও উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক। নাইম মিয়া (২৩) জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানা এলাকার টাংগাব ইউনিয়নের দাওয়া দাইর গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে ও গাজীপুর ভাওয়াল কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। নিহত হাফিজুর রহমান রনি জেলার ত্রিশাল উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের মাগুরজোড়া গ্রামের কৃষক আবদুল কাদিরের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্র জানায়, ছাত্রলীগ নেতা রুহুল আমিন আকাশ নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলা থেকে ময়মনসিংহ নগরীতে তার বোন নাফিয়া আক্তারের বাসায় বেড়াতে আসেন। সেখান এসে রাতে বমি করে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। পরে তার বোনের বাসাতেই রাতে ঘুমিয়ে পড়েন।
নিহতের ভগ্নিপতি মো. আনিছুর রহমান বলেন, মাত্র দেড় মাস আগে রুহুল আমিন আকাশ বিয়ে করেছে। তার স্ত্রী একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করে। গতরাতে সে তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আমার বাসায় বেড়াতে আসে। সন্ধ্যায় তার শারিরিক অবস্থা একটু খারাপ হলে সে বমি করে। এরপর রাতে ঘুমিয়ে পড়ে সকালে হাসপাতালে যাবে বলে বাসা থেকে বের হয়। পরে আজ সোমবার সকাল ১০ টার দিকে নগরীর দিঘারকান্দা শান্তিনগর সিরাজ আলী জামে মসজিদের সামনে আসতেই হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যায়।
হঠাৎ রাস্তার পাশে তাকে মাথা ঘুরে পড়ে যেতে দেখে এগিয়ে আসেন স্থানীয় বাসিন্দা ঈসমাইল হোসেন (৬০) এবং গৃহকর্মী মোছা. বকুল আক্তার (৪০)। তারা তাৎক্ষনিক মাথায় পানি দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এতে সহযোগীতা করেন স্থানীয় বাসিন্দা রতন ও রুহুল আমিন নামের দুই ব্যক্তি। পরে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে তার পরিবারকে জানায়।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন বলেন, এটি স্বাভাবিক মৃত্যু। মৃতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে একটি বিশেষ মহল এই মৃত্যুর ঘটনাটি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে প্রোপাগান্ডা ছড়াতে দেখা গেছে।
এদিকে, এই ছাত্রলীগ নেতার ঘটনাটি নিয়ে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা নিজ নিজ ফেসবুকে পোস্ট করে শোক প্রকাশের মাধ্যমে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। ওইসব পোষ্টে তারা দাবি করেন, এটি অস্বাভাবিক মৃত্যু এবং হত্যাকান্ড।
এর মধ্যে এদিন বিকাল পৌনে ৪টায় বাংলাদেশ স্টুডেন্ট লীগ এর ভেরিফাইড ফেইসবুক পেইজ থেকে একটি পোস্টে দাবি করা হয়, ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিন আকাশ এর মৃতদেহ পাওয়া গেছে রাস্তার পাশে। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ছাত্রলীগ নেতা রুহুল আমিন আকাশ এর অপমৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করার দাবী জানাচ্ছি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার বিদেহী আত্মার শান্তি ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।
জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আহমেদ বলেন, নিহত নাইম মিয়া ৫ মারামারি ১ টি চুরির মামলার আসামী। গত শুক্রবার রাতে পূর্ব শত্রুতার জেরে নাইম মিয়াকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে সন্ত্রাসীরা। পরে পুলিশ জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ কল পেয়ে তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে আজ সোমবার দুপুরে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষনা করেন। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, জেলার ত্রিশাল উপজেলায় গত রবিবার রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন হাফিজুর রহমান রনি (২৩) নামে এক যুবক। আজ সোমবার সকালে মাগুর-জোড়া কানারঘাট এলাকায় এমএসবি ইট ভাটার ড্রেনে হাফিজুর রহমান রনির মরদেহ দেখতে পায় স্থানীয় বাসিন্দারা। মাথা ড্রেনের পানিতে ডোবানো ছিলো। স্বজনরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে হাফিজুর রহমানের মরদেহ শনাক্ত করে। খবর পেয়ে পুলিশ দুপুরে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। ধারণা করা হচ্ছে, মাথায় ইট বা ভারি কিছু দিয়ে আঘাত করে হত্যার পর মরদেহ ড্রেনে ফেলে রেখে যায়। তদন্তের পর বিস্তারিত যাবে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে।
