জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস: শেখ হাসিনার পতন ও এক যুগের শাসনের অবসান

২০২৪ সালের আজকের দিন, ৫ আগস্ট, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। দীর্ঘ এক মাসের রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের শেষদিন হিসেবে এই দিনটিকে অভ্যুত্থানের ক্যালেন্ডারে ‘৩৬ জুলাই’ নাম দেওয়া হয়েছে। এ দিন রাজধানীমুখী ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মানুষ রাজপথে নামেন।
আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্বে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। এর মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগের প্রায় দেড় যুগব্যাপী শাসনের অবসান ঘটে। দুপুরের দিকে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাজপথে নেমে আসে লাখো মানুষ। ঢাকার প্রতিটি মোড়ে মোড়ে মানুষের ঢল নামে। গণভবন, সংসদ ভবন ও সংলগ্ন সরকারি এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
গত বছরের জুলাইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সরকারি চাকরিতে কোটা বহাল রাখার প্রতিবাদে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা দ্রুত সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। “কোটা না মেধা”—এই স্লোগানের আন্দোলন দমন করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি সমর্থকদের হামলায় প্রাণ হারান বহু শিক্ষার্থী। ১৬ জুলাই রংপুরে আবু সাঈদসহ একাধিক মৃত্যুর পর আন্দোলন রূপ নেয় জাতীয় প্রতিরোধে।
এরপরের দিনগুলোতে ক্রমাগত দমন-পীড়নের মুখে শিশু, বৃদ্ধ, নারীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মৃত্যু ঘটে। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা শেখ হাসিনার পদত্যাগের একদফা দাবিতে আন্দোলনের রূপ পরিবর্তন করে। জুলাই মাস রক্তাক্ত বিদ্রোহে রূপ নেয়।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার (OHCHR) প্রকাশিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়—জুলাই-আগস্ট সময়ে ১১৮ শিশুসহ ১,৪০০ জন মানুষ নিহত হন, আহত হন প্রায় ১২,০০০ জন। শিশু হত্যার হার ছিল ১২-১৩ শতাংশ। প্রতিবেদনে এই সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডকে “রাষ্ট্রীয় দমনযন্ত্রের পরিকল্পিত অপব্যবহার” হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার এই দিনটিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। বিকেল ৫টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা। দিনটি উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রীয়-বেসরকারি পর্যায়ে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি।