এক বছরে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়নি: টিআইবি

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির দাবি, বরং ভিন্ন কৌশলে ও ভিন্ন পদ্ধতিতে গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করা হয়েছে, যার ফলে জনগণের তথ্য অধিকার ও অবাধ তথ্য প্রবাহ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে টিআইবির সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে “নতুন বাংলাদেশ: কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী এক বছরের ওপর পর্যবেক্ষণ” শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত সময়ে ৪৯৬ জন সাংবাদিক হয়রানির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ২৬৬ জনকে জুলাই অভ্যুত্থান-সংক্রান্ত হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। দায়িত্ব পালনের সময় হামলায় নিহত হয়েছেন তিনজন সাংবাদিক। এছাড়া ২৪ জনের বেশি গণমাধ্যমকর্মীকে পদচ্যুত, ১৫০ জনের বেশি সাংবাদিক চাকরি হারিয়েছেন, এবং আটটি সংবাদপত্রের সম্পাদক ও ১১টি টেলিভিশন চ্যানেলের বার্তা প্রধানকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
টিআইবির পর্যবেক্ষণে আরও উঠে এসেছে, কিছু কিছু গণমাধ্যম কার্যালয়ে সংঘবদ্ধ মব পাঠিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। একই সঙ্গে তিন ধাপে ১৬৭ জন সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়। সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন নীতিমালার কিছু সংশোধন হলেও তা এখনো কার্যকরভাবে গণমাধ্যমবান্ধব হয়ে ওঠেনি। একই সঙ্গে তথ্য কমিশনকে নিষ্ক্রিয় রেখে, তথ্য অধিকার আইনে সংস্কারে সরকারের অনীহাও লক্ষ করা গেছে।
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিআইবি। সংস্থাটি বলছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুযায়ী কিছু ধারা সংশোধন হলেও অনেক অস্পষ্ট সংজ্ঞা এখনো রয়েছে, যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা তৈরি করছে। এতে আইনের অপব্যবহারের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সরকারি দপ্তরগুলো এখনো তথ্য প্রকাশে গড়িমসি করছে। স্বপ্রণোদিতভাবে তথ্য না প্রকাশের সংস্কৃতি বহাল থাকায় তথ্য অধিকার
কার্যকর হচ্ছে না—এটি গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য এক গভীর সংকেত বলে মনে করছে টিআইবি।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, গবেষণা পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান, ফেলো মো. জুলকারনাইন, শাহজাদা এম আকরাম ও ফারহানা রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।