ছয় মাস বয়সী শিশুর খাবার
 
                                        
                                    ছয় মাস বয়সে শিশুর বাড়ন্ত দ্রুত হয়। মস্তিষ্ক ও হাড়ের বিকাশ ত্বরান্বিত হয়। এ সময় শুধু বুকের দুধ বা ফর্মুলা দুধে শরীরের সব পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয় না। বিশেষ করে আয়রন, জিংক ও কিছু ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সে কারণে এ বয়স থেকেই শিশুকে ধীরে ধীরে সেমি-সলিড খাবারের সঙ্গে পরিচিত করানো প্রয়োজন। সলিড খাবার মানে বুকের দুধ বন্ধ নয়; বুকের দুধ বা ফর্মুলা দুধ শিশুর প্রধান পুষ্টির উৎস থাকবে। সলিড খাবার হবে শুধু একটি পরিপূরক বা কমপ্লিমেন্টারি ফুড, যা অতিরিক্ত পুষ্টি ঘাটতি পূরণে সহায়তা করবে।
প্রথম ১৫ দিনের খাবার পরিকল্পনা
সলিড খাবার শুরু করার প্রথম দুই সপ্তাহ ধীরে, ছোট পরিমাণে শুরু করুন। প্রথমে দিনে দুবার, প্রতিবার ২-৩ চামচ করে দিন। খাবার হবে নরম, মসৃণ ও সহজে গিলতে পারে এমন।
প্রথম খাবার হিসেবে দিতে পারেন
জাউ ভাত (চাল বা চিড়া সেদ্ধ করে তৈরি), সুজি বা সাগু সেদ্ধ করে পাতলা করে তৈরি খাবার, অথবা ডালের পানি মিশিয়ে নরম ভাত। এগুলো সহজে হজম হয় এবং শিশুর পেটের ওপর চাপ ফেলে না।
ধীরে ধীরে যোগ করুন
ফলের মধ্যে পাকা কলা চটকানো, আপেল বা মিষ্টি আলুর পিউরি দেওয়া যেতে পারে। সবজির মধ্যে মিষ্টিকুমড়া, গাজর, আলু বা বেগুন সেদ্ধ করে চটকে দিন। চাল, ডাল ও দুই ধরনের সবজি একসঙ্গে রান্না করে হালকা খিচুড়িও ভালো বিকল্প।
শিশুর খাবারে লবণ, চিনি বা মরিচ ব্যবহার করবেন না–এগুলো কিডনি ও হজমতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। রান্নায় সামান্য সরিষা তেল বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে, যা শিশুর শক্তি চাহিদা পূরণে সাহায্য করে।
খাওয়ানোর পদ্ধতি
শিশুকে খাওয়ানোর সময় আধা-খাড়া বা খাড়া অবস্থায় বসিয়ে দিন, যাতে গলায় খাবার আটকে না যায়। জোর করে খাওয়াবেন না; শিশুর ইচ্ছা ও আগ্রহকে গুরুত্ব দিন। নতুন খাবার শুরু করলে ২-৩ দিন পর্যবেক্ষণ করুন–ত্বকে র্যাশ, বমি বা ডায়রিয়া হচ্ছে কিনা দেখুন। খাবার সবসময় হালকা গরম ও মসৃণ রাখুন।
খাওয়ানোর সময় পরিবেশ শান্ত রাখলে শিশু ধীরে ধীরে খাবারের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে, যা ভবিষ্যতের খাবারের অভ্যাস গঠনে সহায়ক।
যেসব খাবার না দেওয়া ভালো
ছয় মাস বয়সে কিছু ফল ও খাবার শিশুর জন্য উপযুক্ত নয়, কারণ এগুলো গ্যাস বা হজমে সমস্যা করতে পারে। যেমন–আম, তরমুজ, আনারস, মাল্টা বা কমলা, লিচু, কাঁঠাল, পেয়ারা, জাম ও আঙুর। এসব ফল এক বছর বয়সের পর থেকে অল্প করে দেওয়া যেতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি পরামর্শ
১. শিশুর প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করুন। নতুন খাবারে সমস্যা হলে কিছুদিন বিরতি দিয়ে পুনরায় দিন।
২. খাবার তৈরি ও পরিবেশনের সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
৩. রান্না করা খাবার ফ্রিজে রেখে দীর্ঘসময় সংরক্ষণ করবেন না।
৪. শিশুর পাশে থেকে খাওয়ান। এতে গলায় খাবার আটকে যাওয়ার ঝুঁকি কমে।
৫. বুকের দুধ বা ফর্মুলা দুধ নিয়মিত দিন। এটি এখনও শিশুর প্রধান খাদ্য।
লেখক: ক্লিনিক্যাল ডায়াটেশিয়ান, বিডিএন পল্লবী ডায়াবেটিক সেন্টার ও লাইফ কেয়ার মেডিকেল সেন্টার, ঢাকা
 
            
 
                                                                    

 
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                                                         
                                                        