সালমান শাহকে নিয়ে যে দাবি করেন সামিরা
 
                                        
                                    বাংলাদেশের চলচ্চিত্রজগতের ক্ষণজন্মা এক তারকা সালমান শাহ। পারিবারিক নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। তার আকস্মিক মৃত্যু নিয়ে ২৯ বছরের বেশি সময় ধরে চলছে বিতর্ক। ভক্তরা এটাকে ‘হত্যা’ বললেও, মামলার প্রতিবেদনে বারবার উঠে এসেছে এটা ‘আত্মহত্যা’।
প্রয়াত সালমান শাহর সাবেক স্ত্রী সামিরা হক বছর দুয়েক আগে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, সালমান শাহ মানসিকভাবে ছিলেন ‘সুইসাইডাল বাই নেচার’, অর্থাৎ আত্মহত্যাপ্রবণ।
১৯৯২ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে খালার বান্ধবীর মেয়ে সামিরা হককে বিয়ে করেছিলেন সালমান শাহ। সামিরা ছিলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হীরার মেয়ে। তিনি বিউটি পারলার ব্যবসায় জড়িত। সালমানের দুটি সিনেমার পোশাক পরিকল্পনাতেও তিনি অংশ নিয়েছিলেন। সিনেমায় স্টাইল ও ফ্যাশন বিষয়ে সালমান প্রায়ই তার পরামর্শ নিতেন।
২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সালমানের জন্মদিন উপলক্ষে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সামিরাকে বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে শোনা গেছে, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন। শুধু তা-ই নয়, আগেও তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন।
সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন ছিল, সালমান কেন আত্মহত্যা করবেন? জবাবে সামিরা বলেন, ‘ও (ইমন) মেন্টালি সুইসাইডাল বাই নেচার। এর আগেও তিনবার সুইসাইডের চেষ্টা করেছে। মেট্রোপলিটন হাসপাতালের রেকর্ড চেক করলে সেটা জানা যাবে। সেখানে দুবারের রেকর্ড আছে। আরেক হাসপাতালে আছে তৃতীয় রেকর্ড। তিনটাই আমাদের বিয়ের আগের ঘটনা। তিনটা ঘটনাই আমি জানি। একবার মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে করেছিল। আরেকবার আমাকে বিয়েতে রাজি করানোর জন্য করেছে। আরেকবার অন্য একটি ঘটনায় সে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল।’
সালমান কেন আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে উঠলেন, সেই ব্যাখ্যা দিয়ে সামিরা বলেন, ‘ইমন ছবিতে ক্যারিয়ার করতে চায়নি। সে পড়াশোনা করতে চেয়েছিল। এরশাদ (হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ) ও নীলা চৌধুরীকে নিয়ে এক ঘটনায় নীলা চৌধুরী জেলে যান। তিনি ময়মনসিংহ কারাগারে থাকা অবস্থায় ইমন এক দিনও তার মাকে দেখতে যায়নি। কেন? ইমন কিন্তু তার মাকে মা বা আম্মা বলে ডাকত না, বলত “মহিলা”। আমাদের সামনে অবশ্য ওভাবে বলত না। নীলা চৌধুরী যখন শুটিং সেটে যেতেন, ইমন বলত, “মহিলা আসছে”। সেটা শুনে ডলি জহুর আন্টি একদিন তাকে বকা দিয়ে বলেছিলেন “তুই এভাবে ডাকছিস কেন? তোর তো মা হয়।” ইমন তখন হেসে উড়িয়ে দিয়েছে।’
সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী বরাবরই দাবি করে আসছেন, তার ছেলে আত্মহত্যা করেননি, বরং তাকে হত্যা করা হয়েছে।
অন্যদিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সাবেক প্রধান বনজ কুমার মজুমদার আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছিলেন, ‘খুন নয়, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন।’ পিবিআই সেদিন সালমানের আত্মহত্যার পেছনে পাঁচটি কারণও দাঁড় করিয়েছিলেন।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনের বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় সালমান শাহর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর একে একে থানা-পুলিশ, সিআইডি, র্যাব, পিবিআইসহ একাধিক সংস্থা তদন্ত চালায়। সব প্রতিবেদনেই ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলা হলেও সালমানের পরিবারের আপত্তিতে প্রতিবারই তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন করা হয়।
সালমান শাহ ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। সব কটিই ছিল বাণিজ্যিকভাবে সফল। নব্বইয়ের দশকে দেশের চলচ্চিত্রে রোমান্টিক হিরোর নতুন ধারা শুরু হয় তার হাত ধরে। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘বিক্ষোভ’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘প্রেমযুদ্ধ’সহ তার প্রতিটি সিনেমাই বক্স অফিসে হিট হয়।
 
            
 
                                                                    

 
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                                                         
                                                        