নিজেকে অযোগ্য ভাবা মেয়েটাই যেভাবে হয়ে উঠলেন হলিউডের স্পটলাইট

একটা সময় নিজেকে অযোগ্য মনে করতেন ‘টোয়াইলাইট’খ্যাত হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী এমা ওয়াটসন। পর্দায় কাজ শুরু করেছিলেন একেবারে ছোট বয়সে। ‘টোয়াইলাইট’ তাকে ভিন্ন পরিচিতি তৈরি করে দেওয়ার অনেক আগে, যখন তার বয়স মাত্র নয় বছর, হ্যারি পটার সিরিজে হারমায়োনি গ্রেঞ্জারের ভূমিকা কেবল তার ক্যারিয়ার রাতারাতি বদলে দেয়নি, বরং তাকে সরাসরি বিশ্বব্যাপী স্পটলাইটেও ফেলে দিয়েছিল।
যেখানে বেশিরভাগ সময় প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গেই তাকে লড়াই করতে হয়, যা একটি শিশুর জন্য ভয়ের কারণ। আর এ কাজটি করতে গিয়েই তিনি ভয় পেতেন, নিজেকে অযোগ্য মনে করতেন। মূলত স্পটলাইটে আসার কারণেই তার ওপর বাড়তি চাপ থাকত। যেখানেই যেতেন সেখানেই ক্যামেরার ফ্ল্যাশ নিয়মিত জ্বলত। এসব কিছু তাকে মানসিকভাবে দুর্বলও করে দিয়েছিল এক সময়।
সম্প্রতি মার্কিন গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই তুলে ধরেছেন এমা ওয়াটসন। তিনি বলেন, ‘পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, আমার খ্যাতি অর্জন করা সহজ ছিল না। নিজের সম্পর্কে সব সময় উদ্বিগ্ন থাকতাম।’
আমেরিকার পোর্টার ম্যাগাজিনের সঙ্গে কথা বলার সময়, এমা খোলাখুলিভাবে বলেছিলেন যে, সর্বত্র তার পেছনে যে চাপ এবং মনোযোগ ছিল তা মোকাবিলা করা কতটা কঠিন ছিল। ক্রমাগত স্পটলাইটের নিচে ঠেলে দেওয়ার পর তার নিরাপত্তাহীনতা কীভাবে আরও বিস্তৃত হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘কৈশোর পেরিয়ে একজন তরুণ হিসাবে, আমার নিজের প্রতি যত্ন নেওয়ার সুযোগটুকুও পেতাম না। মানুষের যে স্বাভাবিক পরিবর্তন সেটাও ক্যামেরা তুলে ধরা হতো। এ চাপটা নেওয়া আমার জন্য কঠিন ছিল।’
এমা ওয়াটসন আরও বলেছেন, কীভাবে মিডিয়াতে থাকার কারণে তিনি নিজেকে প্রশ্ন করতে বাধ্য হন। সমবয়সি মেয়েরা নিজেদের ভালোমন্দ যখন বুঝতে শিখে গিয়েছেন, তখন তিনি নিজের সম্পর্কে অনিশ্চিত ছিলেন। সে সময় এমা অন্যদের বোঝানোর চেষ্টা করতেন, আসলেই তিনি এসবের জন্য যোগ্য নন।
তিনি বলেন, ‘এত অল্প বয়সে আমি যে ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতাম। লোকেরা আমাকে জিজ্ঞেস করত, ‘তুমি এটা সম্পর্কে কী মনে কর? তুমি কে, তুমি কে, তুমি কে?’ আমি নিজেকে এত অযোগ্য মনে করতাম কারণ আমার কাছে এখনো কোনো উত্তর ছিল না। আমার অনেক বন্ধু ছিল যাদের আত্ম-সচেতনতা ছিল, আমি সেই মেয়েদের ঈর্ষা করতাম। কারণ আমি নিজের সম্পর্কে এত অনিশ্চিত ছিলাম। আমি সবকিছু নিয়ে প্রশ্ন করতাম। আমার প্রতি আগ্রহের মাত্রা দেখে আমি ভীত ছিলাম।”
২০০৯ সালে কলেজে যাওয়ার আগে পর্যন্ত এমন চিন্তাভাবনা তার মধ্যে সব সময় কাজ করত বলে জানান এমা। এরপর হারমায়োনির চরিত্রে ছেড়ে দিয়ে হলিউড থেকে কিছু সময়ের জন্য দূরে সরে যান অভিনেত্রী। এরপর নিজের সম্পর্কে জানার সুযোগ পান। তিনি সেই সিদ্ধান্তকে জীবনের ‘সেরা কাজ’ বলে অভিহিত করেন। পরবর্তীতে পরিপূর্ণ মানুষ হয়েই তিনি ফের কাজ শুরু করেন এবং টোয়ালাইট পরবর্তী ‘এমা ওয়াটসন’ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
এমা মনে করেন, বর্তমানে তার যথেষ্ট আত্ম-বোধ আছে, যা করতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, সেটাই করেন। জীবনের কঠিন সময়গুলোই তাকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন। জাঁকজমক এবং খ্যাতির পেছনে, এমার যাত্রা একটি সত্যির স্মরণ করিয়ে দেয় যে, প্রত্যেকেই বাইরে থেকে যতই নিখুঁত মনে হোক না কেন, তারা আসলে কে তা খুঁজে বের করার জন্য তাদের নিজস্ব লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যায়।