সঞ্চয়পত্রের ২৫ লাখ টাকা জালিয়াতি: বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন কর্মকর্তার কম্পিউটার জব্দ!
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট (এনএসসি) সিস্টেমে জালিয়াতির মাধ্যমে ২৫ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় তিনটি ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ের সঞ্চয়পত্র লেনদেনে যুক্ত তিন কর্মকর্তার কম্পিউটারও জব্দ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গঠিত তদন্ত কমিটি গতকাল বুধবার (২৯ অক্টোবর) এই ব্যবস্থা নেয়। পাশাপাশি সঞ্চয় অধিদপ্তরের এনএসসি সিস্টেমের নিরাপত্তা আরও জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, মতিঝিল কার্যালয়ের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেই এই জালিয়াতি সংঘটিত হয়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, এবং মামলার প্রস্তুতি চলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, “যাদের হিসাবে অর্থ গেছে এবং যারা জালিয়াতিতে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে মামলা করা হবে। সঞ্চয়পত্রের সিস্টেম পরিচালনাকারীদের কারো পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে এই জালিয়াতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে।”
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয় থেকে এক গ্রাহক ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনেন। তার ব্যাংক হিসাব ছিল অগ্রণী ব্যাংকের জাতীয় প্রেস ক্লাব শাখায়। চার দিন পর, সোমবার ওই সঞ্চয়পত্র ভাঙানো হয় এবং টাকা স্থানান্তর করা হয় এনআরবিসি ব্যাংকের দিনাজপুর উপশাখার অন্য এক ব্যক্তির হিসাবে। পরে ওই অর্থ ব্যাংকের রাজধানীর শ্যামলী শাখা থেকে উত্তোলন করা হয়।
একই কৌশলে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে আরও ৩০ লাখ এবং এনআরবি ব্যাংকের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে আসায় তা আটকে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক তিনটি ঘটনায় সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা জানিয়েছেন, সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর কোনো আবেদন তারা করেননি, এমনকি তাদের ফোনে কোনো ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি)ও যায়নি।
এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট তিন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নতুন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, যাদের কাছে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পাসওয়ার্ড ছিল তারা নজরদারিতে আছেন। পাশাপাশি বাইরের কোনো পক্ষ এতে যুক্ত ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত গ্রাহকদের মোট তিন লাখ ৪০ হাজার ৭১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিভিন্ন ব্যাংক ও অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, সঞ্চয় অধিদপ্তর ও পোস্ট অফিস মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার শাখা থেকে এসব সঞ্চয়পত্র কেনা-বেচা করা হয়।


