24 অক্টোবর পল্টন ট্রাজেডি দিবস উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গায় জামায়াতের আলোচনা সভা
২৮ অক্টোবর পল্টন ট্রাজেডি দিবস উপলক্ষেচুয়াডাঙ্গায় জামায়াতের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলমডাঙ্গা, দর্শনা ও জীবননগর উপজেলায় পৃথক
ভাবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াত।
জীবননগর উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত ২০০৬ সালে ২৮ শে অক্টোবর আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীদের বর্বরতা হামলায় নিহত শহীদদের স্মরণে দোয়া ও আলোচনা সভায় চুয়াডাঙ্গা ২ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ও চুয়াডাঙ্গা জেলা আমির রুহুল আমিন বলেন, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামী আপসহীন। যার প্রমাণ ঐতিহাসিক ২৮ অক্টোবর। সেদিন সারাদেশে জামায়াতের কর্মীরা জীবন উৎসর্গ করেছে ইসলামী আন্দোলন ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য। আমাদের শহীদের শুধু জামায়াতের কাছে নয় পুরো জাতির কাছে প্রেরণার বাতিঘর।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকাল ৪ টায় জীবননগর মুক্ত মঞ্চে ঐতিহাসিক ২৮ অক্টোবর আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীদের হাতে শহীদদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
সাধারণ জনতার উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের কি পরিকল্পনা ছিল তা পরবর্তী ১৭ বছরে জাতি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছে। তারা বাংলাদেশকে ভারতের একটি তাবেদার রাজ্য পরিণত করার জন্য সেদিন এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী জামায়াতে ইসলামী, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওপর চূড়ান্ত আঘাত করেছিল। তারা চেয়েছিল এদেশের মাটি থেকে ইসলামী আন্দোলন ও তার নেতৃত্বকে মুছে ফেলার। তার প্রথম পরিকল্পনা হিসাবে তারা সেই সময় ২৮ অক্টোবরকে বেছে নিয়েছে। তারা সারাদেশে লগি বৈঠার তাণ্ডব চালিয়ে শহীদ মুজাহিদ, মাসুম, জসিম, হাবিবুরসহ অসংখ্য নেতাকর্মী ও সাধারণ নাগরিককে হত্যা করেছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে পঙ্গু করে দিয়েছে। আমাদের অফিসগুলো জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। একই সাথে বহু মানুষের ঘরবাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও প্রতিষ্ঠান পুড়িয়েছে। পুরো বিশ্ব সেদিন হতবাক হয়ে গিয়েছিল। রাজনীতির নামে এ কোন ধরনের জ্বালাও পোড়াও নীতি। আসলে তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতার মসনদ দখল করা। তারা ভারতের প্রেসক্রিপশনে এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিলিয়ে দিয়ে দেশ ও জাতির ওপর অসভ্য ও বর্বর আঘাত হেনেছে।
উপজেলা জামায়েত ইসলামীর সহ-সাধারণ সম্পাদক আবু বক্করের সঞ্চালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন , জামায়াতের জেলা সেক্রেটারি এ্যাডভোকেট আদুজ্জামান, ছাত্রশিবিরের জেলা সভাপতি সাগর আহম্মেদ, জেলা তালিমুল কুরআন বিভাগের সভাপতি মাওলানা মহিউদ্দীন, জেলা প্রশিক্ষণ সম্পাদক জিয়াউল হক, জেলা উলামা বিভাগের সভাপতি মাওলানা' ইসরাইল হোসেন, জেলা মাজিলিসুল মুফাসসিরিন পরিষদের সভাপতি মাওলানা হাফিজুর রহমান, জীবননগর উপজলো আমীর মাওলানা সাজেদুর রহমান, জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি এমদাদুল্লাহ মহসিন, নায়েবে আমীর হাফেজ বিল্লাল হোসেন,, সহকারী সেক্রেটারী সাইদুল হক, বায়তুলমাল সম্পাদক আশাবুল হক মল্লিক, উপজেলা আইটি সম্পাদক হারুন অর রশীদ, উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ সভাপতি কামাল হোসেন, উপজেলা যুব বিভাগের সভাপতি মাজেদুর রহমান লিটন, সেক্রেটারি জাহিদুল ইসলাম, যুবনেতা আব্দুল মোতালেব, পৌর যুব বিভাগের সভাপতি আরিফুল ইসলাম জোয়ারদার, সালাউদ্দীন আহম্মদ জামায়াত নেতা ফজলুর রহমান, শফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী সহ প্রমুখ।
২৮ অক্টোবর পল্টন ট্র্যাজেডি দিবস পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আলমডাঙ্গা উপজেলা শাখার উদ্যোগে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় উপজেলা মঞ্চে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন আলমডাঙ্গা পৌর জামায়াতের আমির মাহের আলী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ও চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ রাসেল।
সভায় প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকার পল্টনে আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনী লগি-বৈঠা নিয়ে যে নৃশংস হামলা চালিয়েছিল, তা ছিল ইতিহাসের এক বর্বরোচিত অধ্যায়। সেই দিনকার শহীদদের স্মরণে আমাদের তৌহিদী জনতাকে ইসলামের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আগামী নভেম্বর মাসে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের রায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন আমাদের দাবির প্রতি উপেক্ষা করা হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা মাঠে নামব। কেউ ষড়যন্ত্র করলে তার পরিণতি হবে শেখ হাসিনার চেয়েও ভয়াবহ।
অ্যাডভোকেট রাসেল লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখা এবং ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ গঠনের আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আলতাফ হোসাইন, যুব বিভাগের সভাপতি ও চুয়াডাঙ্গা ১ আসনের নির্বাচন পরিচালক শেখ নূর মোহাম্মদ হুসাইন টিপু, জেলা আইন আদালত সম্পাদক ও আলমডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দারুস সালাম, আলমডাঙ্গা উপজেলা আমীর ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী প্রভাষক শফিউল আলম বকুল, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সেক্রেটারি হাফেজ আমিরুল ইসলাম, গাংনী আসমানখালি থানা আমির আব্বাস উদ্দিন, আলমডাঙ্গা উপজেলা শাখার ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি আখতারুজ্জামান, উপজেলা নায়েবে আমির ইউসুফ আলী মাস্টার, উপজেলা সেক্রেটারি মামুন রেজা, পৌর সেক্রেটারি মুসলিম উদ্দিন, উপজেলা যুব বিভাগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম, পৌর যুব বিভাগের সাইফুল্লাহসহ আলমডাঙ্গা উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন দায়িত্বশীলগণ উপস্থিত ছিলেন। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন উপজেলা জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় কর্মীরা। সভা শেষে ২০০৬ সালের পল্টন ট্র্যাজেডির নিহতদের স্মরণে দোয়া করা হয়।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীদের লগি বৈঠার আঘাতে নিহত ও আহতদের বিচারের দাবীতে দর্শনায় জামায়াত নেতা মাওলানা আজিজুর রহমান বলেছেন- সেদিনের প্রকাশ্য দিবালোকে আওয়ামীলীগ ও তার গুন্ডাদের লগি-বৈঠার তান্ডব আইয়ামে জাহেলিয়াতের সন্ত্রাসকেও হার মানিয়েছিল। জীবন্ত মানুষকে যে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে তার শরীরের উপর নৃত্য করে সারা বিশে^র জাতিকে কলংকিত করা হয়েছিল। আমরা সেদিনের প্রতিশোধ এদেশে ইসলাম কায়েমের মাধ্যমে নিতে চাই। তিনি গতকাল মঙ্গলবার বাদ আসর দর্শনা রেলবাজারস্থ শহীদ শাহরিয়ার মুক্ত মঞ্চে দর্শনা থানা জামায়াতে ইসলামী আয়েজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যেএ কথা বলেন।
তিনি পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা উল্লেখ করে বলেন- সে একজন খুনি, স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট। সে মনে করেছিল ৪১ সাল পর্যন্ত কেউ তার গায়ে হাত দিতে পারবেনা। কিন্ত্র ছাত্রদের হাতে যে তার পতন হতে পারে কষ্মিনকালেও সে চিন্তা করেনি। ৫ই আগস্ট গণঅভুত্থানের পর আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে যারা দলবাজি, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি ও আওয়ামীলীগার সাজতে গিয়েছিল তাদের অনেকেই আজ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, সরকারে উচ্চপদস্থ আমলা, বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব, ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক দুর্নীতিগ্রস্থ সবাই পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এ থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে, ভুল করলে পরিনতি এ রকমই হবে। এসব অন্যায় অত্যাচার করে প্রকারন্তে আমাদের সহযোগীতা করেছে। তৎকালীন সরকার আমাদের হত্যাকারী, জঙ্গী এসব অপবাদ দিয়ে বিশে^ আমাদের পরিচয় বাড়িয়ে দিয়েছে। আওয়ায়ীলীগ অপপ্রচার করে আমাদের রাজনীতির মাঠে আগিয়ে দিয়েছে। আরেকটি পক্ষ আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের কায়দায় আমাদের বিরোধিতা করে আগামীতে সরকারে যাবার পথ সুগম করে দিচ্ছে। আমাদের এই প্রচষ্টা সরকারে না পৌছানো পর্যন্ত চলবে ইনশাল্লাহ।
জামায়াতের দর্শনা থানা শাখার আমীর মাওলানা রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- জামায়াতের চুয়াডাঙ্গা জেলা টিম সদস্য মোঃ আব্দুর রউফ, সহকারী সেক্রেটারী ও সাবেক দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল কাদের, জামায়াতের দর্শনা থানা সেক্রেটারী মাহবুবুর রহমান টুকু, পৌর আমীর ও সাবেক কমিশনার সাহিকুল আলম অপু, দর্শনা থানা শাখার সহকারী সেক্রেটারী সাবেক ছাত্রনেতা জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের দর্শনা থানা সভাপতি মোঃ লোকমান হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠান শেষে ও মোনাজাত পরিচালনা করেন মাজলিসুল মুফাসসিরিনের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আবু জার গিফারী।


