যশোরে ৩২৭ বছরের ঐতিহ্য ধারণ করে দাঁড়িয়ে চাঁচড়ার শিব মন্দির!
যশোর শহর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে চাঁচড়া এলাকায় অবস্থিত শতবর্ষী শিব মন্দির আজও ধারণ করে আছে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক গৌরবগাঁথা। স্থানীয়দের কাছে চাঁচড়া শিব মন্দির শুধু একটি উপাসনালয় নয়, এটি ধর্মীয় সম্প্রীতি, স্থাপত্য সৌন্দর্য ও প্রাচীন সংস্কৃতির এক জীবন্ত নিদর্শন।
প্রায় ৩২৭ বছরের পুরোনো এই মন্দিরটি ১৬৯৬ খ্রিস্টাব্দের দিকে নির্মাণ করেন তৎকালীন রাজা মনোহর রায়। তৎকালীন সময়ে শিবরাত্রি ও দোল উৎসবকে কেন্দ্র করে চাঁচড়া ও আশপাশের গ্রামগুলোতে ভক্তদের মিলনমেলা বসত। মন্দির চত্বরে অনুষ্ঠিত হতো পূজা, মেলা ও ধর্মীয় সঙ্গীতানুষ্ঠান। বর্তমানে প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে মহাশিবরাত্রিতে বৃহৎ পরিসরে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ২০১৫ সাল থেকে ১৩ ও ১৪ এপ্রিল পূজার অনুমতি পায় মন্দিরটি। প্রতি সোমবার (২৭ অক্টোবর) স্থানীয় পুরোহিত এখানে পূজাঅর্চনা করে থাকেন।
মন্দিরের স্থাপত্যে তৎকালীন বাংলা শৈলীর ছাপ স্পষ্ট। উঁচু চূড়া এবং খোদাই করা টেরাকোটা ফলক আজও দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার এক মেলবন্ধন ঘটেছে এই প্রাচীন মন্দিরে। এটি বাংলার মধ্যযুগীয় স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন, যা আজও যশোরের ঐতিহ্যবাহী অতীতের সাক্ষী হয়ে আছে।
তবে কালের বিবর্তনে ক্ষয়ে গেছে মন্দিরের বেশ কিছু অংশ। সময়ের প্রভাবে কিছুটা জীর্ণ হলেও প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের সহযোগিতায় মন্দিরটি পূজার জন্য মোটামুটি প্রস্তুত করা হয়েছে। মন্দিরটির সেবায়েত গোপাল চন্দ্র দাস জানিয়েছেন, আরও সংষ্কারের প্রয়োজন রয়েছে।
উৎসবের দিন ছাড়াও প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা মন্দিরটি দেখতে আসেন।
বর্তমানে গোপাল চন্দ্র দাস ও তার স্ত্রী শঙ্করী রানী দাস বিনা বেতনেই মন্দিরটির দেখাশোনা করেন। সরকারের কাছে তাদের কোনো আর্থিক দাবি নেই, তবে সরকার যদি তাদের নিয়মিত বেতনভুক্ত করতে চান, তাতেও তাদের কোনো আপত্তি নেই বলে তারা জানান।
ইতিহাস আর ঐতিহ্যের মেলবন্ধন এই চাঁচড়া শিব মন্দির কেবল একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়, এটি যশোরের প্রাচীন সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি সংরক্ষণে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।


