রাশিয়ার যুদ্ধে যশোরের যুবক: মানবপাচার চক্রের বিরুদ্ধে মামলা
 
                                        
                                    যশোরের জাফর হোসেনসহ আরও কয়েকজনকে মিথ্যা প্রলোভনে রাশিয়ায় নিয়ে যুদ্ধে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগে মানবপাচার চক্রের চার সদস্যের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার আদালতে মামলা হয়েছে। জাফরের ভাই সদর উপজেলার বড় মেঘলা গ্রামের খাইরুল ইসলামের ছেলে বজলুর রহমান এ মামলাটি করেছেন। জাফরসহ আরও অনেকেই বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে কাজ করছেন। তারা এখন একটি বাঙ্কারে রয়েছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে যশোরের মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ড. মো. আতোয়ার রহমান বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআইডি পুলিশকে আদেশ দিয়েছেন। বাদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার কাজী মো. রেজওয়ান সেতু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আসামিরা হলেন, নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কলাবাড়িয়া পশ্চিম পাড়ার আশরাফ মোল্যার ছেলে ও ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম আবুল হাসান, তার পার্টনার ঢাকার দক্ষিণখান থানার আশকোন এলাকার শহিদুল ইসলামের মেয়ে ফাবিহা জেরিন তামান্না , চট্টগ্রামের লোহাগড়া থানার মাঝেরপাড়া এলাকার মো. ইসহাকের ছেলে আলমগীর হোসেন দেলোয়ার ও ঢাকার নয়া পল্টন এলাকার মাহাতাব সেন্টার ভবনের ভ্যাকেশন প্লানারের মালিক শফিকুর রহমান।
বজলুর রহমান মামলায় উল্লেখ করেছেন, আসামি এস এম আবুল হাসান এবং ফাবিহা জেরিন তামান্না তার ভাই জাফর হোসেনকে রাশিয়ায় ক্লিনার অথবা শেফস অ্যাসিসেন্ট পদে মাসিক এক লাখ ২০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোট সাত লাখ ১০ হাজার টাকা নেন। বলা হয়, সরাসরি রাশিয়ায় যাওয়া যাবেনা। প্রথমে তাকে সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর সৌদি আরব থেকে ভিসা সংগ্রহ করে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হবে। ২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর উল্লেখিত আসামিদ্বয় জাফর হোসেনসহ চাকরি প্রত্যাশী ১০ জনকে প্রথমে সৌদি আরবে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেখান থেকে তাদেরকে গ্রহণ করেন আসামি শফিকুর রহমান। ২ মাস থাকার পর একই বছরের ২২ ডিসেম্বর জাফর হোসেনসহ ১০ জনকে রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবার্গ শহরে নিয়ে যান শফিকুর রহমান। রাশিয়ায় যাবার পর অপর আসামি আলমগীর হোসেন দেলোয়ারসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাদেরকে গ্রহণ করে নিজেদের হেফাজতে রাখেন। এরপর আলমগীর হোসেন দেলোয়ার এবং তার সঙ্গীরা তাদেরকে জানান, আর্মি ক্যাম্পে ক্লিনার বা শেফস অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করার আগে সকলকে আর্মি ক্যাম্পে ২০ দিনের ট্রেনিং সম্পন্ন করতে হবে। একথা বলে তারা জাফর হোসেনসহ ১০ জনকে রাশিয়ার একটি আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর জাফর হোসেনসহ অন্যরা জানতে পারেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে অংশ গ্রহণ করাতে ২০২৬ সালের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ১ বছরের জন্য জনপ্রতি ১৪ হাজার ডলারে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন আসামি আলমগীর হোসেন দেলোয়ার ও শফিকুর রহমান। ফলে তারা রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করতে বাধ্য হন। বিষয়টি জানতে পেরে নিজের জীবন রক্ষার্থে আকরাম হোসেন নামে এক যুবক কৌশলে আর্মি ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যান এবং পরে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এরপর জাফর হোসেনসহ অন্যরা রাশিয়ার আর্মির নির্যাতনের কারণে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে বাধ্য হন। জাফর হোসেন বর্তমানে ইউক্রেনের ডোনেৎস্ক শহরের একটি যুদ্ধক্যাম্পের মাটির নিচের বাংকারে অবস্থান করছেন। সেখানে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় তার ডান পায়ের পাজর ও উরুতে বোমার স্পিøন্টার বিদ্ধ হলে তিনি গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসা শেষে পুনরায় তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। সর্বশেষ জাফর হোসেনের সাথে সোহান মিয়া নামে এক যুবক গত ২০ জুন ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন। বিষয়টি হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েজ মেসেজের মাধ্যমে ভাই বজলুর রহমানকে জানিয়েছেন জাফর হোসেন এবং তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য বলেছেন।
 
            
 
                                                                    

 
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                                                         
                                                        