ভারতীয় বিষেই নিঃশেষের পথে সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতি!
বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতি এখন চরম হুমকিতে। ভারতীয় কীটনাশক দিয়ে মাছ ধরার ভয়াবহ প্রবণতায় ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চলের মৎস্যসম্পদ, ডলফিনসহ জলজ প্রাণী, পাখি ও ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছপালা।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের তথ্যমতে, গত চার মাসে (জুন–সেপ্টেম্বর) শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে চালানো আড়াই শতাধিক অভিযানে ১৩২ জন অপরাধীকে আটক করা হয়েছে। জব্দ হয়েছে ৪৫ বোতল ভারতীয় বিষ, ৪ কেজি বিষ পাউডার, ৬৫৭ কেজি বিষযুক্ত মাছ, ২২ বস্তা বিষে ধরা শুঁটকি, ৩৭৫ কেজি কাঁকড়া, ২৪২টি ট্রলার–নৌকা ও প্রায় ২০ হাজার ফুট জাল।
স্থানীয় জেলেরা জানায়, অধিকাংশ দরিদ্র জেলে মহাজনের দাদনে জড়িয়ে পড়ে বিষ ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। মহাজনরা বিভিন্ন ডিলারের কাছ থেকে ভারতীয় কীটনাশক এনে দেয়। এই বিষ নদীর পানিতে ছড়িয়ে মাছ আহরণ করা হয়। পরে বনেই সুন্দরীগাছ কেটে মাচা তৈরি করে বিষে ধরা মাছ শুকিয়ে শুঁটকি বানানো হয়। এতে যেমন বনের কাঠ নষ্ট হচ্ছে, তেমনি বিষের প্রভাবে মাটিও দূষিত হচ্ছে।
গাবতলা গ্রামের জেলে আ. সাত্তার বলেন, "প্রকৃত জেলেরা কখনোই বিষ দিয়ে মাছ ধরে না। কিন্তু কিছু অসাধু জেলে মহাজনের চাপে বিষ ব্যবহার করে। আমরা আটক হলেও মহাজনরা রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। "
সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, বিষ দিয়ে মাছ শিকার শুধু মাছ নয়, বনের পানি, প্রাণী ও গাছের শ্বাসমূলকেও মারাত্মক ক্ষতি করছে। এমনকি বিষযুক্ত মাছ মানুষের শরীরেও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। দ্রুত বিষ সনাক্তের কিট সরবরাহ করা না হলে বিপর্যয় ঠেকানো কঠিন হবে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন,
হরিণ শিকার ও বিষ দিয়ে মাছ ধরা ঠেকাতে ড্রোন নজরদারি চালু হয়েছে। তবুও ভারতীয় কীটনাশক সহজলভ্য হওয়ায় এ অপরাধ বন্ধ হচ্ছে না। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় কীটনাশক বিক্রি নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, "সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় কীটনাশক বিক্রি করা ডিলারদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যারা অবৈধভাবে ভারতীয় কীটনাশক মজুত ও বিক্রি করছে, তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। "
পরিবেশবিদদের মতে, মহাজনদের চাপ, দারিদ্র্য ও প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগে চলমান এই বিষ দস্যুতা থামানো না গেলে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতি এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।


