পোস্টগ্রাজুয়েট সংস্কারে ৭ দফা, সেগমেন্টাল পাস-ক্যারিঅন চালুর দাবি

সেগমেন্টাল পাস ও ক্যারিঅন পদ্ধতি চালুসহ পোস্টগ্রাজুয়েট কোর্সে সাত দফা সংস্কার দাবিতে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. শামীম আহমেদকে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল কমিউনিটি।
রোববার (১৩ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা এই দাবিনামা তুলে ধরেন। একই দাবিতে দেশের বিভিন্ন বিভাগেও স্মারকলিপি বিতরণ করা হয়।
বাংলাদেশ মেডিকেল কমিউনিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, মেডিকেল পোস্টগ্রাজুয়েট শিক্ষা ব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের অনিয়ম, বৈষম্য ও দুর্বলতা দূর করতে সাত দফা দাবির ভিত্তিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তাদের দাবি অনুযায়ী, বর্তমান চিকিৎসা শিক্ষা ব্যবস্থায় রেসিডেন্সি ও নন-রেসিডেন্সি ট্রেইনিং, পরীক্ষা পদ্ধতি, ভর্তি ফি, আবাসন সুবিধা, থিসিস গ্রান্ট, ক্যারিঅন পদ্ধতি এবং ডিপ্লোমা ডিগ্রির নামসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন।
বিএমসির সাত দফা দাবি:
১. রেসিডেন্সি ও নন-রেসিডেন্সি সংস্কার কমিটি গঠন: যুগোপযোগী কোর্স কারিকুলাম, হাতে-কলমে আধুনিক ইন্টারভেনশন শেখানোর সুযোগ, ই-লগবুক নিশ্চিতকরণ, সব রেসিডেন্টের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা এবং সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামোসহ বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট, উৎসব ভাতা ও চিকিৎসা ভাতা চালুর দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়াও, কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স টিম গঠন, কোর্স ডিউরেশনের পুনর্বিবেচনা এবং ট্রেনিংয়ের স্বীকৃতি প্রদানের কথা বলা হয়েছে।
২. সেগমেন্টাল পাশ নিশ্চিতকরণ: কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করে ২০২৫ সালের জানুয়ারি সেশন থেকেই সেগমেন্টাল পাশ চালুর দাবি জানিয়েছে বিএমসি।
৩. পরীক্ষা পদ্ধতির যুগোপযোগী সংস্কার: আন্তর্জাতিক মানে আধুনিকায়ন, ডিপার্টমেন্ট ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক পাস রেটের সমন্বয়, পরীক্ষার ফল দ্রুত প্রকাশ, পরীক্ষকদের জবাবদিহিতায় আনা এবং রিভিউ সিস্টেম চালুর দাবি জানানো হয়। বিএমইউ ছাড়াও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষাকেন্দ্র চালুর দাবি উঠে আসে।
৪. ভর্তি পরীক্ষাকেন্দ্রিক সংস্কার: ভর্তি ফি সর্বোচ্চ এক হাজার টাকায় সীমাবদ্ধ রাখা, ইন্টার্নশিপ শেষের এক বছরের শর্ত বাতিল, কমপক্ষে তিনটি সাবজেক্ট চয়েজের সুযোগ এবং ওয়েটিং লিস্ট ও মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে।
৫. ফেইজ-এ, ফেইজ-বি এবং ডিপ্লোমা ফাইনাল পরীক্ষা কেন্দ্রিক সংস্কার: পরীক্ষা ফি সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা এবং ভর্তি ফি সরকারি-বেসরকারি উভয় প্রতিষ্ঠানে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে সীমিত রাখার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি সরকারি চিকিৎসকদের জন্য বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টির কথাও বলা হয়।
৬. ক্যারিঅন সিস্টেম চালু: যেকোনো পরীক্ষায় ফেল করলে শিক্ষার্থীর জন্য এক বছরের ক্যারিঅন সুবিধা চালুর দাবি জানানো হয়।
৭. ডিপ্লোমা ডিগ্রির নাম পরিবর্তন: ডিপ্লোমা ডিগ্রির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিযোগ্য নামে পরিবর্তন ও গবেষণায় গুরুত্বারোপের দাবি জানানো হয়।
বিএমসি নেতারা জানিয়েছেন, সেগমেন্টাল পাশসহ বেশিরভাগ দাবির বিষয়ে শিক্ষকরা ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তারা দ্রুত প্রস্তাবনার বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চান।
এর আগে গত ২২ মার্চ বিএমইউ ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, প্রো-ভিসি (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার ও রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম প্রমুখের কাছে স্মারকলিপি বিতরণ করা হয়।
ওইদিন বিভিন্ন কর্মসূচিও ঘোষণা করে বিএমসি। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—২২ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত অনলাইন এবং অফলাইনে জনমত তৈরি, ৬ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি বিভাগের শিক্ষকদের কাছে স্মারকলিপি প্রদান এবং ১৩ এপ্রিল প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দুপুর ১২টা থেকে এক ঘণ্টা প্রতীকী কর্মবিরতি ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন।