অশোভন মন্তব্যে ক্ষমা চাইলেন ইবি শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন!
 
                                        
                                    সাজিদ হত্যার ইস্যু ও নারী শিক্ষার্থীদের পোশাক নিয়ে অশোভন মন্তব্যের জেরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দীন মিঝি নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বক্তব্য দিয়ে ভুল স্বীকার করে বলেন, “আমার বক্তব্যে স্লিপ অব টাং হয়েছে, যা অনিচ্ছাকৃত। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।”
এর ঘণ্টাখানেক পর সকাল সাড়ে ১১টায় প্রশাসন ভবন চত্বরে শিক্ষক নাছির উদ্দীনের এমন মন্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও উপাচার্য বরাবর ৫ দফা দাবিতে স্মারকলিপি দেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, ধর্মতত্ত্ব অনুষদে ডিন অধ্যাপক ড. এ বি এম সিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফি, আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. খান মোহাম্মদ ইলিয়াস, অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দীনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এছাড়াও মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মী ও শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো: সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যার পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করে খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে, নিহত সাজিদকে হেয় করা ও নারী শিক্ষার্থীদের পোশাক নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে অধ্যাপক নাছির উদ্দীন মিঝিকে বহিষ্কার করতে হবে, সাজিদ হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ন্যায্য আন্দোলনে বাধাদানকারীদের উদ্দেশ্য যাচাইয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে, শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশ ও আন্দোলনের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং কোনো শিক্ষার্থীর একাডেমিক ফলাফলে বিরূপ প্রভাব না পড়ে তা নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ড. নাছির উদ্দীন মিঝি বলেন, “সাজিদ ইস্যুতে বেশ আগে আমার বিভাগের একজন ছাত্রের সাথে শিক্ষক মন্ডলীর সামনে ঘরোয়া পরিবেশে কথা হয়েছে। এই ছাত্রের সাথে আমার কথা হয়েছে একান্ত ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে, কোনো অফিসিয়াল কোনো বক্তব্য ছিল না সেটা। স্পেসিফিক কোনো মেয়ে অথবা ছেলেকে উদ্দেশ্য করে আমার কোনো বক্তব্য ছিলো না। সাজিদ আব্দুল্লাহর মতো একজন ছাত্র যাকে হারাইছি, তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলবো, এটা অকল্পনীয়, অপ্রত্যাশিত, অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু বিষয়টিকে ওভারল্যাপিং করা হয়েছে বলে মনে করি। ব্যক্তিগত পর্যায়ে তার সাথে কথার ক্ষেত্রে আমার হয়তো কিছু স্লিপ অফ টাং হতে পারে। কথোপকথনের এক পর্যায়ে হয়তো যে স্কেলে কথা বলা দরকার ছিল, সে স্কেল থেকে একটু বেড়ে গেছিলো। একজন শিক্ষক হিসেবে এই স্কেলে কথা বলা উচিত হয়নি সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমার বিষয়টাকে আপনারা একটু মানবিক দুর্বলতা হিসেবে গ্রহণ করবেন এবং সংশ্লিষ্ট সবাই নিঃশর্তে ক্ষমা করবেন আশা করছি।”
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, “গতকাল যে বক্তব্যটি ফাঁস হয়েছে, তাতে স্পষ্ট হয় আপনি একটি আন্দোলনকে বিঘ্নিত করার জন্য শিক্ষার্থীকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। গতকাল পোস্টে সাবেক ছাত্রদলের সভাপতি শিপন ভাই বলেছেন এই শিক্ষককে রিমান্ডে নিলে সাজিদের খুনিরা বেরিয়ে আসবে। আমরা এই ভাইয়ের সাথে সহমত পোষণ করে সিআইডিকে, বাংলাদেশ পুলিশকে এবং প্রশাসনকে অনুরোধ করবো তাকে জিঙ্গাসাবাদ করেন। হতে পারে তিনিও এই হত্যা কাণ্ডের সাথে জড়িত নাহলে আন্দোলনকে বিঘ্নিত করতেন না। তাঁকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করুন, রিমান্ডে নিন, যে সে কিভাবে এই আন্দোলনকে নষ্ট করলো একটি বিভাগের সভাপতি হিসেবে।
একটি নারী শিক্ষার্থীকে নিয়ে কুত্সা এবং যৌন হ্যারাসমেন্টমূলক কথা বলেছেন, তাকে এক বছরের যে শাস্তি সেটি অবশ্যই প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে।”
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বলেন, “কোনো শিক্ষক যদি এই ধরনের কোনো শব্দ ব্যবহার করে সেটা মানহানিকর ও অপমানজনক। তিনি সাংবাদিকের মাধ্যমে এই ধরনের বক্তব্যের জন্য ওপেন দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক অথরিটি হিসেবে শিক্ষকের পক্ষ হিসেবে সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। আগামীতে কোনো শিক্ষক যেন এই ধরনের বক্তব্য না দেয় তোমাদেরকে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করছি।”
ওই শিক্ষকের বিচারের দাবির প্রেক্ষিতে উপাচার্য বলেন- “তোমরা অভিযোগপত্র দেও। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেখো কি করে। ”
প্রসঙ্গত, ২৮ অক্টোবর রাতে ‘ইবিয়ান পরিবার (IUian Family)’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে আব্দুল্লাহ বিন আসাদ নামের এক ব্যবহারকারীর আইডি থেকে একটি অডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দীন মিঝির একটি চার মিনিট ছয় সেকেন্ডের কথোপকথন ছড়িয়ে পরে। ওই অডিওতে তার আল-কুরআন বিভাগের আন্দোলন, শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ও এক নারী শিক্ষার্থীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য শোনা যায়।
 
            
 
                                                                    

 
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                         
                                                         
                                                         
                                                         
                                                         
                                                        