‘ডাকাতরা যেভাবে এসেছে, সেই দৃশ্য এখনো চোখে ভাসছে’

‘ডাকাতরা যেভাবে উপরে এসেছে, সেই দৃশ্য এখনো চোখের সামনে ভাসছে। নিজের চোখে এমন ভয়ংকর অবস্থা দেখে আমি হতভম্ব।’ এভাবেই নিজের বাড়িতে ডাকাত ঢোকার ঘটনা বর্ণনা করছিলেন রাজধানীর ধানমন্ডিতে বসবাসকারী ‘অলংকার নিকেতন’ জুয়েলার্সের মালিক এম এ হান্নান আজাদ।
বুধবার (২৬ মার্চ) ভোরে তার বাড়িতেই ঘটেছে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা। ২০-২৫ জনের একটি ডাকাত দল র্যাব, ম্যাজিস্ট্রেট ও ছাত্র পরিচয়ে ওই বাড়িতে ঢুকে লুটে নিয়েছে প্রায় ৩৭ লাখ টাকা আর আড়াই ভরি স্বর্ণালংকার।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, র্যাবের পোশাকে কয়েকজন দরজা ভেঙে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করছে। পরে তারা ভবন মালিক এম এ হান্নান আজাদের বাসা এবং ওই ভবনে অবস্থিত একটি অফিস থেকে স্বর্ণালংকারসহ নগদ টাকা লুটে নেয়।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলে পুলিশ জানিয়েছে, ডাকাতির ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে ৪ জন ও পরে আরও ২ জনসহ মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন - গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ফরহাদ বীন মোশারফ (৩৩), লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা ইয়াছিন হাসান (২২), নরসিংদীর মোবাশ্বের আহাম্মেদ (২৩), নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজার থানার ওয়াকিল মাহমুদ (২৬), ৫। আবদুল্লাহ (৩২) ও ৬। সুমন (২৯)। তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত স্ক্রু ড্রাইভার, স্লাই রেঞ্জ, দুটি কালো রঙের র্যাবের কটি সদৃশ জ্যাকেট, নগদ ৪৫ হাজার টাকা ও দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ধানমন্ডির ৮ নম্বর রোডের ছয়তলা বাড়িটির পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে বাস করেন মালিক এম এ হান্নান আজাদ। তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় ‘এস এম সোর্সিং’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের অফিস। দ্বিতীয় তলাও ভাড়া দেওয়া।
এদিকে ডাকাতির এই ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় বাদী হয়ে মামলা করেছেন বাড়ির মালিক এম এ হান্নান আজাদের ভাগনে তৌহিদুল ইসলাম লিমন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, বুধবার ভোর ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে তিনটি মাইক্রোবাস এবং একটি প্রাইভেটকারযোগে ডাকাতরা দলবদ্ধভাবে বাসার সামনে আসে। তারা সিকিউরিটি গার্ডদের বলে, ‘আমরা র্যাবের লোক, আমাদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে, এই বাড়িতে অভিযান চালানো হবে, তাড়াতাড়ি গেট খোলেন।’ এ সময় ডাকাতদের কয়েকজনের গায়ে র্যাবের লোগো সম্বলিত জ্যাকেট ছিল।
তৌহিদুল ইসলাম লিমন জানান, ডাকাতরা র্যাব পরিচয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে চাইলে প্রথমে সিকিউরিটি গার্ডরা তাদের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। এসময় ডাকাতরা সিকিউরিটি গার্ডদের গালিগালাজ ও হুমকিধমকি দেয়া শুরু করে। এক পর্যায়ে ডাকাতদের মধ্যে একজন দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে জোর করে গেট খুলে ফেলে। এরপর একযোগে সবাই বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে।
তিনি জানান, এরপর তৃতীয় তলায় গিয়ে ডাকাতরা এস এম সোর্সিং অফিসের পিয়নদের মারধর করে চাবি ছিনিয়ে নেয়। অফিসের ড্রয়ার ভেঙে ২২ লাখ টাকা লুট করে নেয়। ডাকাতদের আরেকটি দল একই অফিসের চতুর্থ তলায় গিয়ে আলমারি ভেঙে আরও ১৩ লাখ টাকা লুট করে নেয়। সর্বশেষ অলংকার নিকেতন জুয়েলার্স ও বাড়ির মালিক এম এ হান্নান আজাদের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। সেখানে আলমারি ভেঙে নগদ দেড় লাখ টাকা, সোনার দুল ও চেইনসহ প্রায় আড়াই ভরি অলংকার লুট করে নেয়।
তৌহিদুল ইসলাম লিমন জানান, আধাঘণ্টার বেশি সময় ধরে এসব ঘটনা চলার পর পুলিশ ও স্থানীয়রা এগিয়ে আসে। এ সময় চার ডাকাতকে ধরে ফেললেও বাকিরা পালিয়ে যায়।
বাড়ির মালিক এম এ হান্নান আজাদ বলেন, ‘র্যাবের জ্যাকেট পরা ডাকাতরা আমার রুমে এসে বলে, টাকা- সোনা যা আছে সব দিয়ে দেন। আমি তাদের বললাম, টাকা-সোনা-দানা বাসায় রাখি না। এরপর তারা বলে, না দিলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। তখন বাসার সব রুমের আলমারি, ড্রয়ার তছনছ করে। এরপর আমাকে বাসার নিচে নিয়ে যায় তারা। এমন অবস্থা দেখে সন্দেহ হলে আমি ৯৯৯ নাম্বারে ফোন দেই। পরে পুলিশ এসে ৪ ডাকাতকে ধরে ফেললেও বাকিরা পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্যশৈনু বলেন, ৯৯৯ এ বাড়ির মালিকের ফোন পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই বাসা ঘিরে ফেলে এবং স্থানীয়দের সহায়তায় চারজনকে গ্রেপ্তার করে।
ধানমন্ডি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামানবলেন, ‘ডাকাতির ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এরই মধ্যে পলাতক কয়েকজন ডাকাতকে শনাক্ত করা হয়েছে। ডাকাতিতে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলবে।’
