‘ফাতেমা আপার মন বড়, এখানে এসে পেট ভরে খাই’
যশোর শহরের কোলাহলপূর্ণ নিউমার্কেটের ভিড়ের মাঝেই নীরবে মানবসেবার এক
অনন্য দৃষ্টান্ত গড়ে তুলেছেন ভাই ভাই হোটেল এর স্বত্বাধিকারী ফাতেমা তুজ জোহরা, যিনি
সবার কাছে পরিচিত ফাতেমা আপা নামে। লাভের হিসাব নয়, মানুষের মুখে একবেলা হাসি ফোটানোই
যার মূল লক্ষ্য।
চুয়াডাঙ্গার সরজগঞ্জে পৈতৃক বাড়ি ফাতেমা তুজ জোহরার। প্রায় ৯ বছর আগে
যশোর খাজুরার মথুরাপুর এলাকার ইমদাদুল ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। মানবিক দায়বদ্ধতা
ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকেই তিন মাস আগে যশোর নিউমার্কেট এলাকায় ভাই ভাই হোটেল
চালু করেন এই দম্পতি। বর্তমানে হোটেলটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন ফাতেমা তুজ জোহরা।
প্রতিদিন তিনি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, মানসিক ভারসাম্যহীন, ভিক্ষুকসহ সমাজের
অসহায় মানুষদের জন্য বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা করে যাচ্ছেন। নিজ খরচে শুরু হলেও
পরবর্তীতে মানবিক সংগঠনের সহযোগিতায় এই উদ্যোগ আরও বিস্তৃত হয়েছে।
প্রতিদিনের খাবারের মেন্যুতে থাকে ভাত, ডাল ও সবজি। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে
খাওয়ান তিনি। ফাতেমা ও তার স্বামী ইমদাদুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন অন্তত ৫০ জন দুঃস্থ
মানুষ যেন তাদের হোটেল থেকে একবেলা পেট ভরে খেতে পারেন। যদিও বর্তমানে গড়ে ২০ থেকে
২৫ জন মানুষ নিয়মিত খাবার খান, তবুও হোটেলের দরজা সবসময় খোলা থাকে অভাবীদের জন্য।
ইমদাদুল ইসলাম বলেন, যাদের টাকা নেই, তারা যেন ক্ষুধার কষ্ট না পায় এই
চিন্তা থেকেই আমাদের এই উদ্যোগ। মানুষ খাওয়াতে পারার মধ্যেই আমরা সবচেয়ে বড় শান্তি
খুঁজে পাই।
এই মানবিক উদ্যোগে প্রতি শুক্রবার বিশেষ মাত্রা যোগ হয়। মাহাবুবুর সোশ্যাল
কেয়ার ফাউন্ডেশন-এর সহযোগিতায় ওই দিন উন্নতমানের খাবারের আয়োজন করা হয়। এতে প্রায় দুই
শতাধিক অসহায় মানুষ বিনামূল্যে একবেলা খাবার গ্রহণ করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফাতেমা নিজ হাতে টেবিলে টেবিলে খাবার পরিবেশন করছেন। মানবিক এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে ৭০ বছর বয়সী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মখলেচুর মিয়া বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে
এখানে খেতে পারি। আগেও কয়েকবার খেয়েছি। আল্লাহ যেন তাদের আরও সামর্থ্য দেন।’
মানসিক ভারসাম্যহীন জরিনা বিবি বলেন, ‘অনেকে দান করে
না। কিন্তু ফাতেমা আপার মন বড়। এখানে এসে পেট ভরে খাই, দোয়া করি।’
প্রতিবেশী দোকানদাররা ও স্থানীয়রা এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করছেন। তারা বলছেন, গরিব ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এমন উদ্যোগ সমাজে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত
স্থাপন করেছে।
হোটেলের কর্মচারী ইমন হোসেন জানান, আপা বলে দিয়েছেন-টাকা না থাকলেও
কেউ যেন না খেয়ে ফেরে না। এই নির্দেশ মেনেই আমরা সবাই কাজ করি।
২৪ ঘণ্টা খোলা ভাই ভাই হোটেল এখন শুধু খাবারের জায়গা নয়, বরং অসহায় মানুষের
জন্য ভরসার এক ঠিকানা। ফাতেমা তুজ জোহরা ও তার স্বামী ইমদাদুল ইসলাম জানান, আল্লাহ
সুযোগ দিলে তারা আজীবন এই মানবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চান।