তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রাজনৈতিক ঐকমত্য, তবে রূপরেখায় মতভিন্নতা

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহারে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মৌলিক ঐকমত্য গড়ে উঠেছে। তবে এই সরকারের কাঠামো, মেয়াদ ও প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগসংক্রান্ত রূপরেখা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়ে গেছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে চলমান সংলাপের দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পৃথক পৃথকভাবে নিজেদের প্রস্তাব তুলে ধরেছে। ইতিমধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত রূপরেখা বাতিল করা হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তির কারণে।
বিএনপির প্রস্তাব: বিকল্পভিত্তিক নিয়োগপ্রক্রিয়া
বিএনপি তাদের প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগে পাঁচটি বিকল্পপদ্ধতি দিয়েছে। এর মধ্যে প্রথম পন্থায় রাষ্ট্রপতি দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একজন উপযুক্ত নির্দলীয় ব্যক্তিকে নিয়োগ দেবেন। দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ পন্থায় সংসদের বিভিন্ন পদে থাকা নেতাদের নিয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে প্রার্থী বাছাইয়ের কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনে ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের কথাও বলা হয়েছে। তবে সবক্ষেত্রেই রাষ্ট্রপতির ভূমিকা সীমিত রাখার বিষয়ে দলটি আগ্রহী।
জামায়াতের প্রস্তাব: নির্দিষ্ট সময়সীমা ও বাছাই প্রক্রিয়া
জামায়াত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ১২০ দিন নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে, যা প্রয়োজনে ৬০ দিন বাড়ানো যাবে। তারা তিনটি ধাপে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের পরিকল্পনা দিয়েছে। প্রথম প্রস্তাবে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বাছাই কমিটির মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো নির্দলীয় প্রার্থীর নাম জমা দেবে। দ্বিতীয় প্রস্তাবে স্পিকারের তত্ত্বাবধানে সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে বাছাইয়ের কথা বলা হয়েছে। তৃতীয় ধাপে একমত না হলে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহালের প্রস্তাব করা হয়েছে, তবে রাষ্ট্রপতির ভূমিকাকে এই প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার পক্ষে তারা।
এনসিপির প্রস্তাব: সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে ভোটাভুটি
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের প্রস্তাবে আইনসভার উচ্চ বা নিম্নকক্ষের সদস্যদের নিয়ে ১১ সদস্যবিশিষ্ট সর্বদলীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। দলগুলো ভোটের আনুপাতিক হারে কমিটিতে প্রতিনিধিত্ব করবে এবং ৫ শতাংশের বেশি ভোট পাওয়া দলগুলো এতে অন্তর্ভুক্ত হবে। সরকারি ও বিরোধী দলগুলো মোট নয়জন নির্দলীয় প্রার্থীর নাম দেবে এবং সর্বদলীয় কমিটি ৮-৩ ভোটে একজন প্রধান উপদেষ্টা চূড়ান্ত করবে। প্রয়োজনে উচ্চকক্ষে র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিংয়ের মাধ্যমে নির্বাচন করার কথাও প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে।
ঐকমত্য কমিশনের পরবর্তী বৈঠকে দলগুলোর এই পৃথক প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। লক্ষ্য হচ্ছে একটি সম্মিলিত ও গ্রহণযোগ্য রূপরেখায় পৌঁছানো, যা সব দলের আস্থা অর্জনে সক্ষম এবং একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করতে পারে।