ফাঁস হওয়া অডিওতে ‘প্রাণঘাতী নির্দেশ’— শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আদেশ আজ

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি কথোপকথনের অডিও রেকর্ডিং প্রকাশ পেয়েছে, যেখানে তাকে জুলাই-আগস্টের বিক্ষোভ দমনে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের অনুমতি দিতে শোনা যায়। ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যম বিবিসি এই অডিওটি যাচাই করে তার সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
বিবিসির ফরেনসিক তদন্ত বলছে, শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর বিশ্লেষণ করে কোনো রকম এডিট বা বিকৃতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই রেকর্ডিংকেই এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ বলে বিবেচনা করছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবীরা।
“যেখানেই পাবে, গুলি করো”— অডিওতে স্পষ্ট নির্দেশ
বিবিসি জানায়, ১৮ জুলাই ২০২৪, নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে একটি ফোনালাপে শেখ হাসিনাকে তার নিরাপত্তা বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের’ অনুমতি দিতে শোনা যায়।
ফাঁস হওয়া অডিওতে বলা হয়:
“যেখানেই পাবে, গুলি করো। ওদের ছেড়ে দিও না।”
এই অডিওটি ২০২৫ সালের মার্চে প্রথম ফাঁস হয়। এর সত্যতা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং ইয়ারশট নামের আন্তর্জাতিক ফরেনসিক অডিও বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান।
বিশ্বমানের ফরেনসিক বিশ্লেষণ: হেরফের নেই
ইয়ারশট জানায়, অডিওটিতে বিদ্যুৎ-ভিত্তিক এনএফ সিগন্যাল ও ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এটি একটি বাস্তব সময়ের রেকর্ডিং। এতে কোনো কৃত্রিম শব্দ, এডিট কিংবা অডিও ফেইক প্রযুক্তির (ডিপফেইক) ব্যবহার পাওয়া যায়নি।
প্রতিক্রিয়ায় সরকার: ‘রেকর্ডিংয়ের সত্যতা নিশ্চিত নয়’
আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বলেন, “বিবিসির উল্লেখ করা টেপটি সত্য কিনা তা নিশ্চিত নয়। তাছাড়া টেপের বক্তব্যেও বেআইনি কোনো উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়নি।”
তবে এই অডিও প্রকাশের পর অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “হাসিনার অডিও এসেছে, ভিজ্যুয়ালও আসবে শিগগিরই। সত্য প্রকাশিত হবেই।”
চার্জ গঠনের আদেশ আজ: ইতিহাসের প্রথম মামলার বিচার শুরু হতে যাচ্ছে
এদিকে, আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন বিষয়ে আদেশ দেবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলার অপর দুই আসামি হলেন—সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং অভ্যুত্থানকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
এ মামলায় শেখ হাসিনাকে সরাসরি হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলায় গ্রেফতার একমাত্র আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আজ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে।
আইনজীবীরা বলছেন, চার্জ গঠন হলে এটি হবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু, যার দিকে এখন পুরো জাতি এবং আন্তর্জাতিক মহল নজর রাখছে।