হারিয়ে যাচ্ছে কামার শিল্পের টুংটাং শব্দ

আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার কামার শিল্পে নেই আগের মতো কর্মচাঞ্চল্য ও ব্যস্ততা। একসময় ঈদের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই কামার দোকানগুলোতে হাতুড়ির টুংটাং শব্দে মুখরিত থাকত দুর্গাপুরের বিভিন্ন বাজার। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে এবং বাজারে চায়না ও আধুনিক যন্ত্রপাতির দখলে ঐতিহ্যবাহী কামার শিল্প আজ পড়েছে অস্তিত্ব সংকটে।
সরেজমিনে দুর্গাপুর পৌর শহরের দেশওয়ালীপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, কামার দোকানগুলোতে ততই কমছে ক্রেতাদের উপস্থিতি। সাধারণত বছরে এই একটি সময়েই ভালো বিক্রির আশায় থাকেন কামার শিল্পীরা। কিন্তু এবারও আশানুরূপ বেচাকেনা না থাকায় হতাশ তারা।
কামাররা জানান, আধুনিক মেশিনে তৈরি কমদামী চায়না দা, ছুরি, চাপাতি বাজারে সহজলভ্য হওয়ায় তাদের হাতে তৈরি সরঞ্জামের চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে। ফলে অনেকেই পৈতৃক এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন।
দেশওয়ালীপাড়ার কামার শিল্পী পরিতোষ কর্মকার বলেন, “৪০ বছর ধরে এ পেশায় আছি। একসময় কোরবানির ঈদের আগে দিন-রাত কাজ করতে হতো। এখন আর সেই চাহিদা নেই। বিক্রি কমে যাওয়ায় অনেকেই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। বাপ-দাদার পেশা বলে এখনো ধরে রেখেছি, কিন্তু চলতে কষ্ট হচ্ছে।”
আরেক কারিগর মিটু কর্মকার জানান, “বংশ পরম্পরার কারণে এখনও কামার পেশার সঙ্গে জড়িত আছি। কিন্তু আধুনিক যন্ত্রপাতির কারণে আমাদের তৈরি জিনিসপত্র এখন আর তেমন বিক্রি হয় না। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।”
চকলেংগুরার কামার শিল্পী লিটন বলেন, “আগে ঈদের সময় হাতের কাজ সামলাতে পারতাম না, আর এখন দোকানে বসে থাকলেও কাজ নেই। আমাদের তৈরি জিনিসের কদর হারিয়ে গেছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা নির্মলেন্দু সরকার বলেন, “একসময় কোরবানির ঈদের আগে কামার দোকানগুলোতে ভিড় লেগে থাকত। এখন আধুনিক যন্ত্রপাতির দাপটে সেই দৃশ্য আর দেখা যায় না। সরকার যেন এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।”
আরেক বাসিন্দা মামুন বলেন, “এই শিল্প আজ ধ্বংসের মুখে। আগে প্রতিটি দোকানে টুংটাং শব্দে মুখর থাকত দুর্গাপুর শহর। এখন তা হারিয়ে গেছে। কামারদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি।”
এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুল তালুকদার বলেন, “কামারদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় তাদের আর্থিক সহযোগিতা ও পেশাগত উন্নয়নে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারি সহায়তা দিয়ে এই শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা চলছে।”
দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য বহনকারী কামার শিল্প আজ টিকে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত। সময়োপযোগী সরকারি উদ্যোগ ও সচেতনতা ছাড়া এ শিল্প হয়তো একদিন ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নেবে— এমন আশঙ্কাই করছেন স্থানীয়রা।