এই ৬টি সাধারণ অভ্যাস নীরবে আপনার আত্মবিশ্বাস ধ্বংস করছে

আত্মবিশ্বাস কি জন্মগত? একদমই নয়। আত্মবিশ্বাস নিয়ে মানুষ জন্মায় না। এটি যেমন ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে, তেমনি ধীরে ধীরে নষ্টও হতে পারে। পুরো ব্যাপারটাই নির্ভর করে আপনি আপনার দৈনন্দিন ছোট ছোট বিষয়গুলোকে কীভাবে সামলান, তার ওপর। আত্মবিশ্বাসকে সফলতার নীরব চালিকা শক্তি বলা যায়। তবে এই নীরব শক্তিকেই নীরবে ধ্বংস করে দিতে পারে আপনার কিছু অভ্যাস। নিচের এই ছয়টি সাধারণ অভ্যাস যদি আজই না বদলান, তাহলে আখেরে নিজেরই ক্ষতি করছেন।
১. কিছু বলার থাকলেও চুপ থাকা
আপনি হয়তো বন্ধুদের আড্ডা কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো মিটিংয়ে আছেন। কেউ একজন এমন কিছু বলল, যার সঙ্গে আপনি একমত নন। বিপরীতে একটি দুর্দান্ত বক্তব্য আপনার আছে। চলমান কথোপকথনে তা হয়তো মূল্য যোগ করতে পারে। কিন্তু স্বভাবসুলভ সংকোচে আপনি তা প্রকাশ করলেন না। আপনার মনে দ্বিধা আর সংশয়। ভাবছেন, কথাটা কি আসলেই প্রকাশযোগ্য! অন্যরা আবার বোকা মনে করবে না তো! না, এটি একদম করবেন না। এ বিষয়টি আপনার আত্মবিশ্বাসকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাই পরেরবার যখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে, নিজের বক্তব্যটি নিঃসংকোচে বলবেন। তা হোক অতি সাধারণ কোনো কথা, গুরুত্বহীন কিংবা কম গুরুত্বপূর্ণ।
২. কেউ আপনার কথা থামিয়ে দিলে কিছু না বলা
আপনি কথা বলছেন। কেউ হয়তো আপনার কথা থামিয়ে তার কথা শুরু করল। সোজা বাংলায় আমরা যাকে বলি, কথার মাঝে বাঁ হাত ঢুকিয়ে দেওয়া। এমতাবস্থায় আপনি ভদ্রতাবশত হয়তো কিছু বলেন না। এটি ঠিক নয়। কেউ যদি থামিয়ে দেয় এবং আপনিও বিনা আপত্তিতে চুপ হয়ে যান, তাহলে আপনার মস্তিষ্কে একটি ভুল বার্তা পৌঁছায়। মস্তিষ্ক মনে করে, আপনার কথাটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। আশপাশের লোকজনের কাছেও এমনটি মনে হয়। অর্থাৎ আপনি নিজেই নিজেকে গুরুত্বহীন করে তুলছেন। ফলে কেউ যদি আপনাকে কথার মাঝখানে থামিয়ে দেয়, সহজ ও শান্তভাবে তাকে বলুন—দাঁড়ান, আমার কথা এখনো শেষ হয়নি।
৩. অপমানকে হাসি-ঠাট্টায় উড়িয়ে দেওয়া
কেউ একটা খারাপ রসিকতা করল বা এমন কিছু বলল, যাতে আপনি কষ্ট পেলেন। কিন্তু আপনি হেসে উড়িয়ে দিলেন, যেন কিছুই হয়নি। ভেতরে-ভেতরে ঠিকই দুঃখ পেলেন। হয়তো নিজের মনকে বোঝালেন—ওইভাবে বলাটা ঠিকই আছে। না, ঠিক নেই। এই অভ্যাস না বদলালে একসময় আপনার আত্মবিশ্বাস চলে যাবে তলানিতে। নিজের কাছে নিজেই ছোট হয়ে যাবেন। তার চেয়ে কারও কথায় আহত হলে, সোজাসুজি তাকে বলুন। ঝগড়া না করে, চিৎকার–চেঁচামেচি না করে, সহজভাবে বলুন, ‘আমি কিন্তু কথাটাকে মজা হিসেবে নিইনি।’ কিংবা ‘কথাটা ওভাবে না বললেও হতো।’
৪. নিজের সিদ্ধান্ত বা মতামতের অতিরিক্ত ব্যাখ্যা দেওয়া
আমরা অনেকেই এই কাজটা করি। নিজেদের সিদ্ধান্ত বা মতামত প্রতিষ্ঠা করার জন্য অতিরিক্ত ব্যাখ্যা দিই। যেন সবার সন্তুষ্টি জরুরি। একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ কখনোই এটি করেন না। তাঁরা নিজেদের বক্তব্য বা সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যার পর থেমে যান। ফলে নিজের যথার্থতা প্রমাণের জন্য বারবার অপ্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা দেওয়া বন্ধ করুন।
৫. অকারণে ‘ক্ষমা’ চাওয়া
ছোট ছোট বিষয়ে, কথায় কথায় দুঃখিত বা সরি বলার অভ্যাস আপনার অস্তিত্বকেই গুরুত্বহীন করে তোলে। অতিরিক্ত ক্ষমা চাওয়া মোটেও সৌজন্য নয়। এর চেয়ে বরং বলুন, ‘একটু সময় হবে কি?’ কিংবা ‘অপেক্ষা করার জন্য, ধন্যবাদ।’
৬. নিজের পোশাক–পরিচ্ছদ নিয়ে উদাসীন থাকা
সেই যে কথায় আছে, প্রথমে দর্শনধারী, তারপর গুণবিচারী। ঠিক তাই। পোশাক–পরিচ্ছদ মানুষের ব্যক্তিত্বে অন্য রকম মাত্রা যোগ করে। আপনি যদি এমন কিছু পরেন, যাতে আপনাকে মানায়, ভালো লাগে—এর অর্থ আপনি নিজেকে নিজের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। এতে অন্যরাও প্রভাবিত হয়। এটি ফ্যাশনের ব্যাপার নয়। পুরোটাই নিজের কাছে নিজেকে গুরুত্ব দেওয়ার ব্যাপার। নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আপনার অন্তর্গত আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে বহুগুণ।
