পেরুতে ৩৫০০ বছরের পুরোনো প্রাচীন শহরের সন্ধান, কারাল সভ্যতার ধারাবাহিকতার প্রমাণ

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুর উত্তরাঞ্চলের বারাঙ্কা প্রদেশে ৩৫০০ বছরের পুরোনো একটি প্রাচীন শহরের সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। ‘পেনিকো’ নামে এ শহরটি আন্দিজ পর্বতমালা, আমাজন জঙ্গল এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলীয় অঞ্চলকে সংযুক্ত করত বলে ধারণা করছেন গবেষকরা। রোববার (৬ জুলাই) এ তথ্য জানায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, পেনিকো ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র এবং এটি গড়ে উঠেছিল খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০ থেকে ১৫০০ সালের মধ্যে। এ সময়েই বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, ভারত, চীন ও সুমের অঞ্চলে গড়ে উঠছিল নানা প্রাচীন সভ্যতা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পেনিকোর আবিষ্কার পেরুর প্রাচীনতম সভ্যতা ‘কারাল’ সম্পর্কে নতুন করে ধারণা দিতে পারে। কারাল সভ্যতা গড়ে উঠেছিল খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সালের দিকে সুপে উপত্যকায়। পেনিকো শহরটি সেই অঞ্চলের কাছাকাছিই অবস্থিত, যা কারালের প্রভাব ও সংযোগ বহন করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. রুথ শ্যাডি, যিনি ১৯৯০-এর দশকে কারাল আবিষ্কার করেছিলেন, পেনিকোর সাম্প্রতিক খনন কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন,
“পেনিকো শহরটি কৌশলগত এক স্থানে গড়ে উঠেছিল, যেখানে উপকূল, পর্বত ও জঙ্গলের জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে পণ্য ও সাংস্কৃতিক বিনিময় হতো।”
ড্রোনে ধারণ করা চিত্রে দেখা গেছে, একটি পাহাড়ের ঢালে গোলাকৃতি এক কাঠামোর চারপাশে ছড়িয়ে আছে প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ। প্রত্নতত্ত্ববিদরা এখন পর্যন্ত ১৮টি স্থাপনার সন্ধান পেয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে উপাসনালয়, ধর্মীয় কেন্দ্র এবং বসবাসযোগ্য ঘরবাড়ি।
খননকার্য চলাকালে এসব স্থাপনায় পাওয়া গেছে মানুষের ও পশুর মূর্তি, ঝিনুক, পুঁতির তৈরি অলংকার এবং ধর্মীয় ব্যবহারের সামগ্রী।
পেরুর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ মার্কো মাচাকুয়াই বলেন, “পেনিকোর গুরুত্ব শুধু এর বয়সে নয়, বরং এটি কারাল সভ্যতার ধারাবাহিকতা ও বিস্তারের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ বহন করে।”
পেরু বরাবরই সমৃদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারের জন্য পরিচিত। এর আগে আবিষ্কৃত হয়েছে আন্দিজ পর্বতের ইনকা সভ্যতার নিদর্শন ‘মাচু পিচু’ এবং উপকূলীয় মরুভূমির রহস্যময় ‘নাজকা রেখা’। এবার পেনিকো শহরের আবিষ্কার সেই ঐতিহ্যে যুক্ত করল আরও একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়।