ট্রাম্প–জ়েলেনস্কি বৈঠক: শান্তিচুক্তির চাপ, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

ওয়াশিংটনে আজ যে বৈঠক হয়েছে, সেটি নিছক কূটনৈতিক আনুষ্ঠানিকতা নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ভলোদিমির জ়েলেনস্কির সাক্ষাৎ ইউক্রেন যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। তবে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কঠিন বাস্তবতা ও রাজনৈতিক হিসাবনিকেশ।
প্রথমত, ট্রাম্প ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন—ক্রাইমিয়া আর ফেরত পাবে না ইউক্রেন, ন্যাটো-তেও যোগ দিতে পারবে না কিয়েভ। এর মানে, আলোচনার টেবিলে ইউক্রেনের দাবি নয়, বরং রাশিয়ার অবস্থানই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ডনবাস অঞ্চল নিয়ে আরও ছাড় দিতে চাপ সৃষ্টি হলে জ়েলেনস্কির সামনে থাকবে অতি সীমিত বিকল্প।
দ্বিতীয়ত, যুদ্ধক্ষেত্রের চিত্রও ইউক্রেনের অনুকূলে নয়। রুশ হামলা অব্যাহত, হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে, অথচ জনগণের ধৈর্য ক্ষয় হচ্ছে। ইউক্রেনের ভেতরে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা জ়েলেনস্কিকে দুর্বল করছে। একদিকে তিনি জনগণের কাছে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মিত্রদের সহায়তা ধরে রাখতে লড়াই করছেন।
তৃতীয়ত, মার্কিন প্রশাসনের নীতি বদলে গেলে ইউরোপের সমর্থন কতটা কার্যকর থাকবে—সেটিও এখন অনিশ্চিত। আগে যখন কিয়েভ সামরিক সহায়তা হারিয়েছিল, তখন ইউরোপ পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি সমর্থনের নিশ্চয়তা নেই। ফলে জ়েলেনস্কির কূটনৈতিক অবস্থান অনেকটাই দুর্বল।
প্রশ্ন হলো—শান্তিচুক্তির পথে গেলে কী হারাবেন জ়েলেনস্কি? কেবল ভূখণ্ড নয়, তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎও ঝুঁকির মুখে পড়বে। যুদ্ধ চালিয়ে গেলে অর্থনৈতিক চাপ, জনঅসন্তোষ ও আন্তর্জাতিক অনিশ্চয়তা তাঁকে গ্রাস করতে পারে।
এই দ্বন্দ্বই বৈঠকটিকে তাৎপর্যপূর্ণ করেছে। একদিকে শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ, অন্যদিকে আত্মসমর্পণের ঝুঁকি। ইতিহাস বলবে, জ়েলেনস্কি কোন পথ বেছে নিলেন। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—এই বৈঠকের প্রভাব ইউক্রেনের সীমান্ত ছাড়িয়ে বৈশ্বিক ভূরাজনীতিকেও নাড়া দেবে।