গাজায় দিনে একবেলারও কম খাবার পাচ্ছে শিশুরা

ইসরায়েলের পূর্ণ অবরোধ ও লাগাতার বোমাবর্ষণের কারণে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় শিশুরা এখন এক বেলার খাবারও পাচ্ছে না- এমনই হৃদয়বিদারক উদ্বেগ প্রকাশ করেছে গাজার ১২টি প্রধান আন্তর্জাতিক ও ফিলিস্তিনি মানবিক সংস্থার নেতারা।
বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে তারা জানান, গাজার মানবিক সহায়তা ব্যবস্থা এখন ‘পুরোপুরি ভেঙে পড়ার’ পথে। ইসরায়েলের ১৮ মাসব্যাপী সামরিক অভিযান ও গত মাসে আরোপিত পূর্ণ অবরোধ পরিস্থিতিকে চরম সংকটময় করে তুলেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ৪৩টি আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সাহায্য সংস্থার মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশই তাদের কার্যক্রম স্থগিত অথবা সীমিত করে দিয়েছে, কারণ গাজার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নির্বিচার বোমাবর্ষণের কারণে চলাচল করা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
অক্সফামের নীতিনির্ধারক বুশরা খালিদি বলেন, শিশুরা এখন এক বেলার কম খাবার খাচ্ছে ও তাদের পরবর্তী খাবারের কোনো নিশ্চয়তা নেই। সবাই কেবল টিনজাত খাবার খাচ্ছে এবং অপুষ্টি ও দুর্ভিক্ষের চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্সের জরুরি সমন্বয়কারী আমান্দে বাজেরল বলেন, সাহায্যকর্মীরা অত্যন্ত সীমিত রসদের মধ্যে সহায়তা দিতে গিয়ে নিরুপায়ভাবে নারী ও শিশুদের দুর্ভোগ ও মৃত্যুর দৃশ্য দেখতে বাধ্য হচ্ছেন। এটি শুধু মানবিক ব্যর্থতা নয়, এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যা একটি জনগোষ্ঠীর বেঁচে থাকার অধিকারকে ইচ্ছাকৃতভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
গাজা শহর থেকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ জানান, উপত্যকাটিতে শিশুখাদ্য বা বেবি ফর্মুলার সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। নবজাতক ও শিশুদের জন্য উপযুক্ত দুধ পাওয়া যাচ্ছে না। বাজার ও ফার্মেসিগুলোতে এসব পণ্য প্রায় নিঃশেষ হয়ে গেছে।
দেইর আল-বালাহ এলাকার আল-আকসা হাসপাতালে সন্তানের চিকিৎসার জন্য আসা ফাদি আহমেদ জানান, আমার ছেলের ফুসফুসে সংক্রমণ হয় ও রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। শেষপর্যন্ত অপুষ্টি ও দুর্বলতার কারণে সে আর লড়াই করতে পারেনি।
এক দাদি ইনতিসার হামদান জানান, তার নাতি দুধের অভাবে তিন দিন না খেয়ে থাকার পরে মারা গেছে। এমন দৃশ্য দেখে বেঁচে থাকাটাও কঠিন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সেখানে বর্তমানে অন্তত ৬০ হাজার ০০০ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে।
সহায়তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, মানবিক কর্মীদের জন্য গাজা এখন পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ স্থান। ২০২৩ এর অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৪০০ এরও বেশি সাহায্যকর্মী ও ১ হাজার ৩০০ স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন। এসব সংস্থা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো যেন সাহায্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি গাজায় বাধাহীনভাবে সহায়তা প্রবেশ ও বিতরণের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে সামরিক অভিযানের নামে গাজায় রীতিমতো ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে দখলদার বাহিনী। গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫১ হাজার ৬৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ১ লাখ ১৬ হাজার ৫০৫ জন।
তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০। কারণ ধ্বংসস্তূপের নিচে যারা চাপা পড়েছে তাদেরও নিহতের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় প্রায় ১৮ মাস ধরে সংঘাত চলছে।
