এবার প্লাস্টিক থেকে তৈরি হবে প্যারাসিটামল

প্যারাসিটামল সাধারণত জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে প্রস্তুত করা হয়। এবার বিজ্ঞানীরা দেখালেন, সেই উৎপাদন বর্জ্য প্লাস্টিক থেকেও সম্ভব যা পরিবেশবান্ধব ও টেকসই বিকল্প হতে পারে। প্লাস্টিক দূষণ ও জ্বালানিনির্ভরতা মোকাবিলায় এক যুগান্তকারী অগ্রগতি অর্জন করেছেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের বিজ্ঞানীরা। তারা ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে প্লাস্টিক বর্জ্য বিশেষ করে পলিথিলিন টেরেফথালেট (পিইটি) প্লাস্টিককে প্যারাসিটামল বা অ্যাসিটামিনোফেনে রূপান্তরের একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন।
সাধারণত জ্বর ও ব্যথানাশক ওষুধ হিসেবে প্যারাসিটামল বেশ জনপ্রিয়। প্যারাসিটামল মূলত প্রদাহবিরোধী রাসায়নিক পদার্থ, যা অ্যাসিটামিনোফেন নামে পরিচিত। এটি জ্বর ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। রোগ নিরাময়ে প্যারাসিটামলের কার্যকারিতা বাড়াতে এর সঙ্গে বিভিন্ন উপাদান যুক্ত করা হয়।
বিজ্ঞানীদের মতে, নতুন এই প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অ্যাসিটামিনোফেন পাওয়া যায়। ছোট ল্যাবেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়। এটি রুম টেম্পারেচারেও কাজ করে, গরম বা ঠাণ্ডা করার প্রয়োজন নেই।
ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গের বায়োটেকনোলজিস্ট স্টিফেন ওয়ালেস বলেন, “এই গবেষণা প্রমাণ করে, পিইটি প্লাস্টিক শুধু বর্জ্য নয় এটি জীবাণু দ্বারা রূপান্তরিত হয়ে উঠতে পারে রোগ প্রতিকারে ব্যবহৃত মূল্যবান উপাদান।”
এই গবেষণার ফলে ‘জীবন্ত মাইক্রোবায়াল ফ্যাক্টরি’ গড়ে তোলার পথ খুলে যেতে পারে, যেগুলো প্লাস্টিক বর্জ্যকে রূপান্তর করে ওষুধসহ নানা টেকসই রাসায়নিক উৎপাদন করতে পারবে।
ইডিনবার্গ ইনোভেশন্সের পরামর্শ প্রধান ইয়ান হ্যাচ বলেন, “স্টিফেন ও তার দলের মতো বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনকে বিশ্বজুড়ে প্রভাব ফেলার মতো আবিষ্কারে রূপ দিতে আমরা কাজ করছি। এই প্রযুক্তি আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা কমিয়ে একটি পুনঃব্যবহারযোগ্য অর্থনীতি গড়ার সম্ভাবনা জাগায়।”
এই সাফল্য প্রমাণ করে, ভবিষ্যতের ওষুধ উৎপাদন হতে পারে পরিবেশবান্ধব, দ্রুত এবং বর্জ্য-নির্ভর। যা একসঙ্গে স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং শিল্পের জন্য সুফল বয়ে আনবে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা ফার্মার অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণাপত্রটি নেচার কেমিস্ট্রি সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।