ছাত্রসংসদ নির্বাচন: তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে তফসিল, বাকিগুলোতে অনিশ্চয়তা

জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে নতুন করে আলোচনার ঢেউ উঠেছে। দীর্ঘদিনের স্থবিরতা কাটিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। এর পর ১১ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) এবং ১৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন হবে।
তবে চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একমাত্র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) এখনো পিছিয়ে রয়েছে। সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছিল চবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন। এরপর দীর্ঘ ৩৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই নির্বাচন আর অনুষ্ঠিত হয়নি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন জানান, “আগামী ১ আগস্ট সিন্ডিকেটে চাকসুর নতুন নীতিমালা চূড়ান্ত হবে। এরপর নির্বাচন পরিচালনা কমিটি রোডম্যাপ প্রকাশ করবে। সব কিছু ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই চাকসু নির্বাচন সম্ভব।”
এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ছাত্রসংসদ নির্বাচনের জন্য এখনো আইনি ভিত্তি নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. তাজাম্মুল হক বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি জকসু নির্বাচন করা সম্ভব। আইনে না থাকলেও সংযুক্ত করে করা যাবে। প্রশাসনের চেষ্টা আছে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি সময়েই নির্বাচন সম্ভব হতে পারে।”
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ছাত্রসংসদ, কুকসু গঠন ও নির্বাচন নিয়ে এখনো প্রাথমিক ধাপ চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) জানান, “প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তিন মাসের মধ্যে কুকসু নিয়ে স্টাডি রিপোর্ট দেবে। এরপর সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
অন্যদিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আইনে ছাত্রসংসদের কোনো বিধান নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “আমাদের এখানে কোনো ইনস্টিটিউশনাল ফ্রেমওয়ার্ক নেই। ছাত্র সংসদ চালু করতে হলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ, আদালতের নির্দেশনা অথবা সংসদের নতুন আইন লাগবে। দলীয় নির্বাচিত সরকার ছাড়া এটি সম্ভব নয়। তবে আমি বিশ্বাস করি, ছাত্র সংসদ চালু হলে একটি সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতি ফিরবে।”
দেশব্যাপী ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে নতুন করে যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে, তা বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হয়ে উঠতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। তবে এখনও যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনগত বা প্রশাসনিক জটিলতা রয়েছে, সেগুলোতে নির্বাচনের ভবিষ্যৎ অনেকটাই অনিশ্চিত রয়ে গেছে।