অবহেলায় থমকে নোবিপ্রবির ওশানোগ্রাফি বিভাগের ল্যাবের নির্মাণ কাজ

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ওশানোগ্রাফি বিভাগের বহুল প্রতীক্ষিত আউটডোর রিসার্চ শেড নির্মাণ প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও এখনো শুরু হয়নি কাজ। ২১ লাখ ১১ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ প্রকল্প ১৯ মে শুরু হয়ে ১৮ জুন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহেও কোনে কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নীলদিঘীর দক্ষিণপ্রান্তে প্রকল্পের নির্ধারিত স্থান বিভিন্ন আগাছায় পরিপূর্ণ। ঝোপঝাড় এর মাঝে একটিমাত্র সাইনবোর্ড দেখা গেলেও নেই কোন স্থাপনা। খোঁজ নিয়ে জানা যায় কাজ শুরুর উদ্দেশ্যে ওশানোগ্রাফি বিভাগের শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে ঝোপঝাড়ও পরিষ্কার করে। তবে ঐ স্থানটি আবারও আগাছায় পরিপূর্ণ হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, একটি গবেষণা নির্ভর বিভাগ হয়েও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগে নেই ন্যূনতম ল্যাব সুবিধা। বর্তমানে যে রুম ল্যাব হিসেবে ব্যবহৃত হয়, সেখানে সব শিক্ষার্থীদের দাঁড়ানোর মতো জায়গাও থাকে না। নেই ল্যাব টেকনিশিয়ান, গ্যাস বা পানির সংযোগ। এ অবস্থায় আউটডোর রিসার্চ শেড প্রকল্পের বিলম্ব নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ময়ূরী নূর বলেন, “বাংলাদেশ সুনীল অর্থনীতি নিয়ে নানা সেমিনার আয়োজন করছে, অথচ আমাদের ওশানোগ্রাফি বিভাগ অবহেলার চরম শিকার। যে ল্যাব আছে তা আসলে একটি স্টোররুম। সামান্য যন্ত্রপাতিও অব্যবস্থাপনায় নষ্ট হয়ে গেছে। দক্ষ টেকনিশিয়ান পর্যন্ত নেই। আউটডোর রিসার্চ ফিল্ডের জায়গায় গাছ কেটে পরিষ্কার করলেও আবার আগাছা জন্মে গেছে। কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন নেই।”
২য় বর্ষের শিক্ষার্থী জিহাদুল ইসলাম রাফি বলেন, “গবেষণানির্ভর একটি বিভাগের এই অবস্থা অত্যন্ত হতাশাজনক। পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা না থাকায় আমাদের শিক্ষা ও গবেষণার স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে। এটি কেবল শিক্ষার্থীদের প্রতি নয়, দেশের সামুদ্রিক গবেষণার ভবিষ্যতের প্রতিও অবহেলা। আমরা চাই, এই সমস্যা দ্রুত সমাধান হোক।”
এ বিষয়ে ওশানোগ্রাফি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. গোলাম মোস্তফা বলেন, “ ভিসি স্যারের আন্তরিকতায় আমরা জায়গা, অর্থ বরাদ্দ সবকিছুই সময় মতো পেয়েছি। বিভাগীয়ভাবে আমাদের দায়িত্ব যা ছিল, সবকিছুই সময়মতো করা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও কাজ শুরু না হওয়া অত্যন্ত হতাশার।”
প্রকল্প পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মাইন উদ্দীন বলেন, “ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময় অনেক আগেই শেষ হয়েছে। তারা সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তারা বলছে, সাইটে নির্মাণ সামগ্রী পৌঁছানো কষ্টসাধ্য। এজন্য কিছু গাছ কেটে সুযোগ করে দিলেও তারা বারবার আপত্তি জানাচ্ছে। এর মাঝে টানা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তারপরও তাদের কাজ শুরুর জন্য বলা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ঠিকাদারকে যে সময় দেওয়া হয়েছিল, সেটি পর্যাপ্ত ছিল না। তবে কাজটি শেষ করতে আমরা আরো সময় বিবেচনা করে দেখবো।”
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এমএস নূর ট্রেডার্স এর মালিক নূর চৌধুরী বলেন, “ওয়ার্ক অর্ডার পাওয়ার পর হাতে ১৫ দিন সময় ছিল। কিন্তু ঈদ এবং পরবর্তী সময়ে বৈরী আবহাওয়ার কারণে কাজ শুরু করা যায়নি। আমরা প্রস্তুত আছি আবহাওয়া ভালো হলেই কাজ শুরু হবে।”
এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজুয়ানুল হক বলেন, “প্রশাসনিকভাবে আমরা দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছি। যেহেতু ডিপিডির মাধ্যমে ওয়ার্ক অর্ডার হয়েছে, তাদেরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”