সাঁকো ভেঙে পড়ায় বুক পানিতে চলাচল

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বারোমাসিয়া (বাণিদাহ) নদীর উপর বাঁশের সাঁকো ভেঙে পড়ায় চলাচলে চরম দূর্ভোগে পড়েছে দুই পাড়ের হাজারও মানুষ। শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে গেলেও বর্তমানে বুক সমান পানি হয়েছে মরা নদীটিতে। ফলে বুক সমান পানি দিয়ে হেটে যাওয়া আসা করতে হচ্ছে চলাচলকারীদের। শিশু কিশোররা সাঁতরিয়ে পারাপার হচ্ছেন ঝুঁকি নিয়ে। প্রায় এক মাস যাবৎ এমন অবস্থায় যাতায়াত চলছে হাজারও মানুষের। যেকোন সময় দূর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত শিমুলবাড়ী এলাকায় নবিউলের ঘাট বা আমিন মেম্বারের ঘাট নামে পরিচিত এলাকায় বাণিদাহ নদী পাড়াপাড়ে নির্মাণ করা হয় ২২০ ফুট লম্বা বাঁশের সাঁকো। প্রতিদিন শতশত মানুষ পারাপার হতো সাঁকো দিয়ে। কিন্তু এক মাসে সাঁকোর দক্ষিণ দিকে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ফিট সাঁকোটি ভেঙে যায়। তারপর থেকে এমন অবস্থা দেখা দিয়েছে। নদীর দু’পাড়ের বাসিন্দারা জানান, আগে বারোমাসিয়া নদীপাড়ের মানুষরা ছোট ছোট ডিঙি নৌকা দিয়ে পাড়াপাড় করতেন। ওই এলাকায় প্রথমে করিমের ঘাট, পরে নবিউলের এবং সবশেষ আমিন মেম্বারের ঘাট হিসেবে পরিচিত ছিল। ঘাটগুলো ইজারাদারের মাধ্যমে পরিচালিত হতো। ঘাটের নৌকায় পাড়াপাড় হতো মানুষজন।
কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় বারোমাসিয়া নদী ছোট হয়ে যায়। শুষ্ক মৌসুমে হাটু পানিতে চলে আসে নদীর পানি। ফলে দু’পাড়ের বাসিন্দারা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে তা দিয়ে চলাচল শুরু করেন। স্থানীয়রা বলছেন, প্রায় ১০ বছর ধরে ওই পথে সাঁকো ব্যবহার করছেন তারা। তবে বর্ষাকাল আসলে পানি বেড়ে নড়বড়ে হয়ে যায়। তাই বর্ষার শুরুতে সাঁকো সংস্কার করেন তারা। এবারও বাঁশের সাকোটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তারা। কিন্তু মাসখানেক আগে হঠাৎ করে নদীতে পানি বেড়ে কচুরিপানা জমে তীব্র স্রোত তৈরি হয়ে নড়েবড়ে বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে পড়ে। ফলে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত শিমুলবাড়ী, চরগোরকমন্ডল, ঝাঁউকুটি, পশ্চিম ফুলমতি, নাওডাঙ্গা ও শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের হকবাজার ও পাশ্ববর্তী লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাহাট ইউনিয়নের চরখারুয়া এবং খারুয়াসহ ৮ গ্রামের হাজারও মানুষ এখন নদী পাড়াপাড়ে চরম বিপাকে পড়েছেন।
কিশামত শিমুলবাড়ী এলাকার তাহের আলী বলেন, দু:খের কথা বলে শেষ করা যাবেনা। ব্যাগে নতুন কাপড় নিয়ে বের হই। ভিজে এক বুক পানি ভেঙে পাড় হয়ে কাপড় বদল করে হাটে যেতে হয়। পাশের ঝাউকুটি এলাকার নুর ইসলাম বলেন, প্রায় এক মাস হয়ে গেল। এখন পর্যন্ত ভাঙা সাঁকোটি মেরামতের জন্য উদ্যোগ নেয়নি। প্রতিদিন বাইসাইকেল কাঁধে নিয়ে বারোমাসিয়া নদীর পারাপার হচ্ছি। ওই এরাকার মর্জিনা বেগম ও জাহানারা বেগম জানান, তারা নদীপার চর থেকে ভুট্টা গাছ জ্বালানি হিসেবে
আনেন। কিন্তু সাকো না থাকায় মাথায় নিয়ে ভিজে আসতে হয়। অনেক সময় শুকনো গাছ ভিজে গেলে আবারও শুকাতে হয়। কয়েকটি শিশু কিশোর জানান, পানি বাড়ায় স্কুলে যান না তারা। পাড় হতে হলে সাতার দিয়ে যেতে হয়। চর খারুয়া এলাকার শিক্ষার্থী জুয়েল রানা, খারুয়া এলাকার মাসুদ রানা ও ঝাউকুটি এলাকার শিক্ষার্থী হাসানুর রহমান বলেন, এখন স্কুল কলেজ বন্ধ। মাঝে মধ্যে সাঁতরিয়ে নদী ওপাড়ে যাই। বই খাতা নিয়ে তো সাতার দেয়া যাবেনা। সাকো না হলে আমরা স্কুলে যেতে পারবো না। দ্রুত সাঁকোটি মেরামত করা দরকার।
লালমনিরহাট উপজেলার চর খারুয়া এলাকার বাসিন্দা তসলিম উদ্দিন জানান, আমার এলাকার শত শত মানুষজন এই পথেই নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বালারহাট বাজারে নিয়মিত আসা যাওয়া করি। এছাড়াও আমাদের এলাকার ছেলে মেয়েরা নাওডাঙ্গা স্কুল এন্ড ও বালারহাট আদর্শ স্কুলে পড়েন। সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় আমরা চরম দুর্ভোগ নিয়ে আসা যাওয়া করছি। বাচ্চারা স্কুল কলেজ যেতে পারছেনা। মৎস্য খামারি আতাউর রহমান রতন ও মজিবর রহমান বাবু বলেন, নদীর ওপারে মাছ চাষ করেছি। প্রতিদিন যাওয়া আসা করতে হয়। সাঁকো না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছি। মাছের খাদ্য সামগ্রী নিতে পারছিনা। মাছ বিক্রি করতে পাড়ছি না। যদি যাই সাতার দিয়ে যাই।
কিশামত শিমুলবাড়ী এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আমিনুল হক বলেন, এবার আগে ভাগে কয়দিন বৃষ্টি ছিল। ফলে নদীর পানি বাড়ে। খুব স্রোতও হয়। স্রোতে ভেঙে যায়। আমরাদের দাবি দ্রুত সাকোটি মেরামত করা হোক। নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাছেন আলী জানান, দুপাড়ের হাজার হাজার মানুষ ওই সাকো দিয়ে পারাপার করতেন। সাকোটি ভেঙে যাওয়ায় তারা দুর্ভোগে পড়েছেন। বিশেষ করে ছেলে মেয়েরা পাড় হতে পাড়ছেনা। স্কুল কলেজ যেতে পারছেনা। কিন্তু পানি বেড়ে নদীর প্রস্ত বেড়ে যাওয়ায় অনেক বড় সাকো দিতে হবে। উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আমা করছি তারা ব্যবস্থা নেবেন।
তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সিরাজউদ্দৌলা জানান, সরেজমিন পরিদর্শন করা হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।