কখনোই ঈদের আমেজ আসে না তাদের জীবনে

মুসলামানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতরের আরও ৪-৫ দিন বাকি। তবে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ঈদের আমেজ। এখন কেউ ব্যস্ত ঈদের কেনাকাটায়, কেউবা আছেন নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার পথে। তবে নিজেদের জীবনে ঈদের এমন আমেজ টের পান না শান্তি বেগম, জাহানারা কিংবা শুক্কুর মামুনরা। ঈদে কেনাকাটা কিংবা বাড়ি ফেরা দূরে থাক, প্রতিবেলার খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হয় তাদের।
শান্তি বেগম, জাহানারা, হাওয়া বেগম, আব্দুল হাকিম আর শুক্কুর মামুনদের জীবন কাটছে রাজধানীর তেজগাঁও ১৪ নম্বরে তেজগাঁও-বিজয় স্মরণী ফ্লাইওভারের নিচের সড়কে। ফ্লাইওভারের স্প্যানগুলোই তাদের মাথার ওপরের ছাদ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় ২ যুগ ধরে শান্তি বেগমদের মতো আরও অর্ধশতাধিক মানুষ বসবাস করছেন এখানেই। তাদের কেউ ভিক্ষুক, কেউবা টোকাই, কেউ কাজ করেন মানুষের বাসাবাড়িতে।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) ইফতারের আগমুহূর্তে সড়কের পাশে বসেই কথা হয় শান্তি বেগমের সঙ্গে। সেসময় সড়কের পাশে খোলা জায়গায় বসে মাটির চুলায় রাতের খাবার রান্না করছিলেন তিনি। ১৯৮৮ সালে গ্রাম ছেড়ে স্বামী সঙ্গে ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন শান্তি বেগম। এরপর থেকেই তার জীবন এখানেই কাটছে। ২০০৮ সালে ক্যান্সারে স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে কাগজ আর প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে জীবন চালাচ্ছেন তিনি।
শান্তি বেগম জানান, তার বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামে। ১৯৮৮ সালে বন্যার সময় অভাবের কারণে বাড়ির ভিটে বিক্রি করে সুখের আশায় ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সুখ কখনোই ধরা দেয়নি তার জীবনে। নাম শান্তি বেগম হলেও শান্তির দেখা কখনোই পাননি। এখন কোনো ভিটেমাটি না থাকায় গ্রামেও ফেরার উপায় নেই আর।
ঈদ উপলক্ষে কিছু কেনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পিন্দনের (পরনের) শাড়ি নাই আমার, ঈদের কথা কী কমু? ঈদ আমাগো জীবনে আসে না। ঈদ হইলো বড়লোকের জন্য।’
শান্তিবেগমের পাশেই পলিথিনের একটি ঝুপড়িতে বাস করেন বৃদ্ধা জাহানারা। ভিক্ষা করে জীবন চালান তিনি। কিন্তু বয়সের ভারে এখন ঠিকমতো চলতেও পারেন না। ঈদের কথা জানতে চাইলে জাহানারা জলেন, ‘খাওনের অভাবে রোজা রাখতে পারি না, ঈদের চিন্তা কইরা লাভ কী? এখন খালি মরণের চিন্তা করি। আল্লাহ যত তাড়াতাড়ি নেবে ততই ভালো। এই বয়সে এত কষ্ট আর সহ্য হয় না।’
ওই ফ্লাইওভারের নিচে আরেকটি ঝুপড়িতে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন ভিক্ষুক শুক্কুর মামুন। নিজের বয়স ৭০ বছর বেশি বলে দাবি করলেন তিনি। আগে শ্রমিকের কাজ করলেও সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর শারীরিক পরিশ্রম করতে পারে না আর। এছাড়াও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত তিনি।
শুক্কুর মামুন বলেন, ‘বউটার হাড্ডি ক্ষয় হয়া গেছে। একটুও হাঁটা চলাফেরা করতে পারে না, সারাদিন শুয়ে থাকে। এক্সিডেন্টের পর আমার বাম হাতে কোনো শক্তি পাই না। তাছাড়া শ্বাসকষ্টের জন্য প্রতিদিন ৬৫ টাকার ওষুধ খাওয়া লাগে। তাই বাধ্য হইয়া ভিক্ষা করতে হয়। ভিক্ষার টাকায় দুই মানুষের ওষুধ আর খাওয়া জোগার করতে পারি না। ঈদে কিছু কিনমু ক্যামনে? কিছু কেনার শখও নাই। ঈদে যদি কেউ আমারে ওষুদের ব্যবস্থা কইরা দিত তাহলে সবচেয়ে ভালো হইতো।’