নাটোরের কাঁচাগোল্লা’ শুধু একটি মিষ্টির নাম নয়, এটি একটি ইতিহাস, একটি আবেগের নাম

নাটোরের ঐতিহ্য শুধু রাজবাড়ি আর ইতিহাসেই সীমাবদ্ধ নয়। এই জেলার গর্ব আর জনপ্রিয়তার অন্যতম পরিচায়ক — কাঁচাগোল্লা।
নাটোরের কাঁচাগোল্লা’ শুধু একটি মিষ্টির নাম নয়, এটি একটি ইতিহাস, একটি আবেগের নাম।
প্রায় আড়াই শতাব্দী ধরে রসনাবিলাসীদের মন জয় করে আসছে এই ছানার তৈরি অনন্য মিষ্টান্নটি।
এর সৃষ্টি আনুমানিক ১৭৫৭ সালের কথা। নাটোর শহরের লালবাজারে ছিল মিষ্টির একটি পুরনো দোকান, যার মালিক ছিলেন মধুসূদন পাল। তিনি দোকানে প্রতিদিন রসগোল্লা, চমচম, পানতোয়া ইত্যাদি মিষ্টি তৈরি করতেন। কিন্তু একদিন মিষ্টির কারিগর না আসায় বিপদে পড়লেন মধুসূদন। তৎক্ষণাৎ তিনি চিন্তা করলেন, এত ছানা নষ্ট হলে কী হবে?
তবে মধুসূদন মিষ্টির প্রতি তাঁর ভালোবাসা আর পরিশ্রমের কারণে হার মানলেন না। তিনি ছানাতে চিনির রস ঢাললেন এবং তা চুলায় জ্বাল দিয়ে নামিয়ে রাখলেন। কিছুক্ষণ পর, এক দারুণ সুগন্ধি, মিষ্টি স্বাদে ভরা নতুন ধরনের মিষ্টি তৈরি হলো। মুখে দিয়ে দেখলেন, এটি ছিল অন্য যেকোনো মিষ্টির তুলনায় আরও সুস্বাদু।
কিন্তু নাম কী হবে? একসময় মধুসূদন বুঝলেন, এই নতুন মিষ্টি তৈরির প্রক্রিয়ায় ছানাকে একদম কাঁচা রেখেই চিনির রসে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। তখনই নামকরণ হলো "কাঁচাগোল্লা"।
কাঁচাগোল্লার মিষ্টি স্বাদ এতই আকর্ষণীয় ছিল যে, তা দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠল। শহরের সবাই ধীরে ধীরে কাঁচাগোল্লার প্রেমে পড়তে লাগল। মধুসূদন প্রতিদিন ৩ থেকে ৩.৫ মণ ছানা দিয়ে কাঁচাগোল্লা তৈরি করতে থাকেন। এমনকি তাঁর দোকান থেকে বের হওয়ার সময়, ঢোল বাজিয়ে জানানো হতো, "কাঁচাগোল্লা প্রস্তুত!"
আজও, কাঁচাগোল্লা নাটোরের ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।দুধ আর ছানার মোলায়েম এক ছোঁয়ায় তৈরি এই মিষ্টান্ন শুধু স্বাদের জন্য নয়, এর পেছনে রয়েছে এক ঐতিহাসিক গৌরবগাথা। আর এই স্বতন্ত্রতাই একে এনে দিয়েছে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (GI Product) হিসেবে স্বীকৃতি। ২০২৩ সালে এটি ভৌগোলিক নির্দেশক (GI) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
আজকের দিনে, দেশের নানা প্রান্তে, এমনকি বিদেশেও নাটোরের কাঁচাগোল্লা পাঠানো হয়।
কাঁচাগোল্লা — এক মিষ্টি ঐতিহ্য, এক গর্বিত নাম।