মিরসরাইয়ে কালবৈশাখী, অর্ধশত ঘরবাড়ি লণ্ডভণ্ড

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখী ঝড়ে অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এছাড়া গাছের ডাল ভেঙ্গে বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙ্গে গেছে। সোমবার (২১ এপ্রিল) কালবৈশাখী ঝড়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এলাকার বহু মানুষ। ঝড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও অর্ধশতাধিক বসতঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। গাছ পড়ে কৃষকের একটি গরু মারা গেছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় মোমবাতির আলোয় পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, কালবৈশাখী ঝড়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বেশকিছু বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। গাছ পড়ে কৃষকের গরু মারা গেছে। ঝড়ে উপজেলার ইছাখালী ও মঘাদিয়া ইউনিয়নের হাসিমনগর এলাকায় বসতঘর এবং দোকানপাট ভেঙ্গে বেশি ক্ষতি হয়েছে। হাসিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে তারেক স্টোর নামের একটি দোকানের উপর গাছ পড়ে দোকান লণ্ডভণ্ড হয়ে প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
দিনের প্রথমার্ধে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কে গাছ পড়ে যানচলাচল সাময়িক বন্ধ হয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের উপর বড় বড় গাছ ভেঙ্গে পড়ায় ২৫টি সিমেন্ট ও কাঠের বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। ইছাখালী ইউনিয়নের চরশরত উচ্চ বিদ্যালয়ের টিনের ছাউনি উড়ে যাওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। একই ইউনিয়নের চরশরত আবাসন প্রকল্পের কয়েকটি বসতঘরের ছাউনি উড়ে গেছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় পরীক্ষার্থীদের মোমবাতি জ্বালিয়ে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে দেখা গেছে।
মঘাদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মাঈন উদ্দিন টিপু বলেন, ‘ঝড়ে আমাদের গ্রামের কমবেশি বেশকিছু বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন ঘরবাড়ির ছাউনি উড়ে গেছে, রাস্তায় গাছ পড়ে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে।’
মধ্যম মঘাদিয়া এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, ‘ঝড়ে আমার ঘরের ছাউনি উড়ে গেছে। এতে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’
মঘাদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আলা উদ্দিন বলেন, ‘স্বল্প সময়ের ঝড়ে এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে বাড়িঘর-গাছপালা ভেঙে পড়েছে সব এলাকায়। এ কারণে অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। হাসিমনগর এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, গাছ পড়ে কৃষক ওহিদুর রহমানের একটি গরু মারা গেছে।’
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর মিরসরাই জোনাল অফিসের ডিজিএম আদনান আহম্মদ চৌধুরী বলেন, ‘সোমবার ভোরের ঝড়ে মিরসরাই জোনাল অফিসের অধীনে আবুরহাট, মঘাদিয়া, হাশিমনগর, বানাতলী, আবুতোরাব বাজার, ইছাখালী এলাকায় সিমেন্ট ও কাঠের ১৩টি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।’
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর বারইয়ারহাট জোনাল অফিসের ডিজিএম হেদায়েত উল্ল্যাহ বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে বারইয়ারহাট জোনাল অফিসের অধীনে ১২টি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে গেছে। অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সোমবার সন্ধ্যার মধ্যে বেশকিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা গেলেও পুরো লাইনে বিদ্যুৎ স্বাভাবিক হতে মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় লাগবে।’
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, ‘এখনো বসতঘরের ক্ষতিগ্রস্তুদের তথ্য পাইনি। খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো আবেদন করলে তাদের সহায়তা করা হবে। তবে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গিয়ে বিদ্যুত সরবরাহ বিঘ্ন ঘটে।’