৬২ মামলার পলাতক আসামি বাচ্চু এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে

বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি, শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের হওয়া ৬২ মামলায় পলাতক রয়েছেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই গত বছরের ১২ জুন বাচ্চুর বিরুদ্ধে ৫৮ মামলায় চার্জশিট দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২১ জুন তার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা এবং গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। কিন্তু বিগত সরকারের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত বাচ্চু আজও ধরা পড়েনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। চার্জশিট দাখিলের আগে থেকেই দেশে ছিলেন তিনি। এখনও দেশেই আছেন বলে মনে করেন দুদক কর্মকর্তারা।
দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু কোথায় আছেন কেউ জানেন না। তবে তিনি দেশেই আছেন বলে মনে করা হচ্ছে। আদালতে দেওয়া দুদকের আবেদনেও তার দেশে থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। চার্জশিট দেওয়ার পর বাচ্চুকে গ্রেফতারে কিছুটা তৎপর হয়ে উঠেছিলেন দুদক কর্মকর্তারা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা থেমে যায়। আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পরও সেই তৎরপরতা আর দেখা যায়নি। তবে আদালত থেকে তার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের বহিরাগমন শাখাসহ (ইমিগ্রেশন শাখা) সব বন্দর কর্তৃপক্ষকে দুদক থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
আদালতে দেওয়া আবেদনে দুদকের পরিচালক মোহাম্মদ মোরশেদ আলম উল্লেখ করেন, ‘বেসিক ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতা, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাসহ সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতিসহ ব্যাংকের প্রায় ২ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ এবং আত্মসাতে সহায়তার অপরাধে সর্বমোট ৫৯টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৫৮টিতে তাকে অভিযুক্ত করা হয়।’
দুদকের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, শেখ আবদুল হাই বাচ্চু দেশেই আছেন, এ বিষয়ে তারা নিশ্চিত। কারণ ইমিগ্রেশনের সবশেষ তথ্য নিয়ে দুদকের গোয়েন্দারা জেনেছেন, বাচ্চু সর্বশেষ দুবাই যান ২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল। সেখান থেকে তিনি কানাডায় যান। কানাডা থেকে দেশে ফিরে আসেন ২০২৪ সালের ৮ জুন। ১২ জুন দুদকের দায়ের করা ৫৯ মামলার মধ্যে ৫৮টিতে তাকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেওয়া হয়। এরপর বৈধ পথে তার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কোনও তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিংবা সংস্থার কাছে নেই। তবে অবৈধ পথে তিনি দেশত্যাগ করেছেন কিনা সে তথ্যও নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে।
বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি ছাড়াও শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে আরও চারটি মামলা রয়েছে দুদকের। তাদের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন ছাড়াও ২৫০ কোটি টাকার বেশি অর্থের মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ আছে।
বাচ্চুর বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল না হওয়ার বিষয়ে দুদকের কোনও কর্মকর্তা সদুত্তর দিতে পারেননি। তার গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিলের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে নিয়োজিত দুদকের জিআরও (সহকারী পরিচালক) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আদালতের এখতিয়ারে।’
তবে দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বলেন, ‘আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর সেটা পুলিশের কাছে পাঠানো হয়। পুলিশেরই সেই পরোয়ানা তামিল করার কথা।’