কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে ‘ধীরে চল’ নীতিকে ইতিবাচক দেখছেন বিশেষজ্ঞরা

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে অন্তর্বর্তী সরকার সঠিক পথেই হাঁটছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মার্কিন ও পাকিস্তানি কূটনীতিকদের সফরসহ সম্প্রতি বিভিন্ন ইস্যুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘ধীরে চল’ নীতি অব্যাহত রাখারও পরামর্শ তাদের।
গত সপ্তাহের শেষভাগে তিনদিনের সফরে ঢাকায় আসেন দুই মার্কিন উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিক ও অ্যান্ড্রু হেরাপ। সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পাশাপাশি উচ্চ-প্রতিনিধি, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই মার্কিন প্রতিনিধি দল। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে এটিই প্রথম সফর। তাই এই সফরকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে উভয়পক্ষ।
শুল্ক নীতি ইস্যুতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া না জানালেও ৯০ দিনের সময় চেয়ে ওয়াশিংটনে চিঠি পাঠিয়েছিল ঢাকা। সদ্য সমাপ্ত সফরেও একাধিকবার ট্যারিফ ও বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশের উদ্যোগের বিষয়ে জানানো হয় মার্কিন প্রতিনিধিদের। ধীরে চলার এই নীতিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে বেশ আগ্রহী ভূমিকায় পাকিস্তান। বুধবার ১৫ বছর পর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসে দুদেশের পররাষ্ট্র সচিব। কূটনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি বাণিজ্যিক, শিক্ষা, কৃষি ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগে মনোযোগ প্রতিবেশীদের। তবে পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা কি ভারতের সঙ্গে চলমান টানাপোড়েনে প্রভাব ফেলবে?
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেন, ‘কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে ভালো কৌশল বাংলাদেশ অমলম্বন করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা বলছে, সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সময় নিয়েছে। দেশটির সরকারের কাছে বাংলাদেশ যখন একটা প্রস্তাব রাখছে, সেটা দেখা যাচ্ছে তাৎক্ষণিকভাবে নাকচ করে দেয়া হয়নি। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের দূতাবাস রয়েছে, সেখানকার কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কূটনৈতিক আলাপ চালিয়ে যেতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্ক রাখতে পারে। যেটা বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করে আবার দেশ দুটিরও স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় না। এটা ফরেন পলিসি থেকে ভবিষ্যতে একটা দিক নির্দেশনা দেবে।’
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমাদের মধ্যে আত্মসচেতনতা বোধ তৈরি হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপট থেকে আমরা চেষ্টা করছি সবার সঙ্গে সম্পর্কে পুনর্বিন্যাস করতে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন সবার সঙ্গে সমতা এবং মর্যাদার ভিত্তিতে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে আমরা আগ্রহী।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে, তাতে ভারতের খুব চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। জাতীয় স্বার্থের আলোকেই আমাদের সম্পর্ক পরিচালনা করতে হবে। যেহেতু ভারত নিকট প্রতিবেশী, সেহেতু তাদের সম্পর্কের বিষয়টিও বিবেচনায় রেখে আমাদের কাজটা করতে হবে।’
এছাড়া মিয়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রণী ভূমিকা ভবিষ্যতে ইতিবাচক ফল দেবে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।