আলুর বাম্পার ফলনেও লোকসানের চিন্তায় দিশেহারা কৃষক

চলতি মৌসুমে আলু উৎপাদনের শীর্ষ জেলা মুন্সিগঞ্জে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। অনুকূল আবহাওয়া পোকা-মাকড়ের সংক্রমন না হওয়া সর্বোপরি বড় ধরণের কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হওয়ায় এ বছর আলুর ফলন ও গুণগত মান বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। জেলার কৃষক, আলু ব্যবসায়ী, হিমাগার মালিক-শ্রমিকরা আলু তোলা, সংরক্ষণে এখন চরম ব্যস্ততায় সময় কাটাচ্ছেন।
বিগত বছর আলুর আশাতীত দাম পাওয়ায় জেলার কৃষকরা আলু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠে, এর ফলে জমির ভাড়া, বীজ আলুর দাম, শ্রমিকের মজুরী অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। এছাড়া সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ দিতে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। এর ফলে ভালো ফলন পেলেও উৎপাদন খরচ উঠাতে না পারায় লোকসানের চিন্তায় দিশেহারা জেলার কৃষকরা।
এদিকে এ বছর আলু সংরক্ষণে হিমাগার ভাড়াও বেশী গুণতে হচ্ছে কৃষকদের এতে প্রান্তিক কৃষকরা আলু সংরক্ষণ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। নিরুপায় অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে কম দামে আলু বিক্রি করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি রবি মৌসুমে জেলার ৬ উপজেলায় আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৩৪ হাজার ৩৫৫ হেক্টর ধরা হলেও আবাদ হয়েছে ৩৪ হাজার ৭৫৮ হেক্টর। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১০ লাখ ৩৬ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন ধরা হলেও প্রকৃত উৎপাদন ১২ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে।
সরেজমিনে সিরাজদিখান উপজেলার মালখানগর এলাকায় ঘুরে আলু চাষি খালেক মিয়া বলেন, আলু ব্যবসায়ীরা বর্তমানে ৫৫ কেজি বস্তার ১০০ বস্তা আলু ৯২ হাজার টাকা দর বলছে অথচ ১০০ বস্তা আলু উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১লাখ ১৫ হাজার টাকা। এর ফলে প্রতি কেজি আলুতে পাঁচ থেকে সাত টাকা ক্ষতি গুণতে হচ্ছে কৃষকদের।
তিনি আরও বলেন, এ বছর ডায়মন্ড জাতের বীজ আলুর বাক্স (৫০ কেজি) ব্যবসায়ীরা কৃষকদের জিম্মি করে ৬ হাজার টাকার বাক্স ক্ষেত্র বিশেষে ৩৩ হাজার টাকায় কিনতে বাধ্য করেছে। বীজ আলু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এছাড়া আলু সংরক্ষণে হিমাগারের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। প্রভাবশালী ও বড় মাপের আলু সংরক্ষণকারী, মধ্যস্বত্ব্যভোগীরা হিমাগারের অগ্রিম ভাড়া নেয়ায় ৫০ থেকে ১শত বস্তা সংরক্ষণে প্রান্তিক চাষিরা এখন চরম বিপাকে পড়েছেন বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত জেলার ৬৪ টি হিমাগারের মধ্যে ৫৮ টি সচল রয়েছে। এসব হিমাগারে প্রায় পাঁচ লক্ষ ৪০ হাজার ৭শত ৬০ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণের সুযোগ রয়েছে।
এদিকে সদর উপজেলার মুক্তারপুরের কদম রুসুল কোল্ডষ্টোরেজ মালিক দুলাল মণ্ডল বলেন, আগে যা ভাড়া রাখতাম তার চেয়ে খরচ অনেকটা বেড়েছে তাই ভাড়া বৃদ্ধি করতে হয়েছে। তবে কত টাকা নেয়া হচ্ছে তা বলতে রাজি হননি তিনি।
জেলা কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, এ অঞ্চলে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সার প্রয়োগে উৎপাদন খরচ বাড়ছে, আলুর বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারীভাবে কেনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এছাড়া বীজ আলু ও খাবার আলু আলাদাভাবে সংরক্ষণের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বীজ আলু ব্যবসায়ীদের লাগামহীন দর নিয়ন্ত্রণে পরবর্তী বছর থেকে আমদানিকৃত বীজ আলুর বাক্সে দাম উল্লেখ করে বাজারজাত করার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
সারাদিনের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড করুন চ্যানেল 24 অ্যাপ-
