প্রশসানের ‘শুভ হালখাতা’

লাল-নীল কাগজের ঝালর টানানো। ব্যানার ফেস্টুনে সাজানো চত্বর। উৎসব উৎসব আমেজ। সাজানো ঘোড়ার গাড়ী। গরুর গাড়ী দাঁড়ানো। আশপাশে দৃশ্যমান নানারকম গ্রামীণ জীবনের অনুসঙ্গ। উপজেলা ভূমি অফিস জুড়ে উৎসবের সাজ। একদিকে মানুষের জটলা। দিচ্ছেন জমির খাজনা। অন্যদিকে চলছে মলা, মুড়ি ও রসগোল্লা খাওয়ার ধুম।
বৈশাখের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলা ভূমি অফিস চত্ত্বরের সাজগোজ ছিল এমন। মূলত এসব আয়োজন উপজেলা প্রশাসনের হাল খাতা ঘিরে। বাংলা নববর্ষ ঘিরে উপজেলা প্রশাসন আয়োজন করেছে ভুমির খাজনা আদায়ে ‘শুভ হালখাতা।’
প্রশাসনের অন্য রকম এ হালখাতায় সরব উপস্থিতি ছিল ভূমি মালিকদেরও। ব্যাপক সাড়া ছিল খাজনা পরিশোধ করতে আসা মানুষদের। ভূমি অফিস চত্ত্বরের গোল ঘরে আয়োজিত হালখাতার সকালে উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিব্বির আহমেদ। একই সাথে উপজেলা একটি পৌরসভাসহ ১৪ টি ইউনিয়নে দিনব্যাপী চলে হালখাতা। কর পরিশোধ করতে আসা ভূমি মালিকদের খাওয়ানো হয় মলা. মুড়ি ও রসগোল্লা।
উপজেলা ভূমি অফিস জানায়, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রতিবছর গড়ে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকার ভূমি কর আদায় করা হয়। কিন্তু গত বছর ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা বকেয়া ছিল। ভূমি মালিকরা নানা কারণে কর দিতে আসতেন না। অনেকে কর দিতে এসে অফিসের বাইরে দালালের খপ্পরে পড়ে যায় এমন অভিযোগও আছে। সব মিলে প্রতিবছর বকেয়া থেকেই যায়। এসব কর আদায়ে এবারে ভিন্নরকম উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।
নাগশ্বেরী পৌরসভার ৩ নম্বর ওর্য়াডের মধুর হাইল্যা গ্রামের বাসিন্দা সোহরাব আলী জানান, আগে উপজলো ভূমি অফিসে খাজনা পরশিোধ করতে আসলে দালাল চলে আসে। এতে বাড়তি টাকা খরচ হতো। আজকের হালখাতার কারণে কোন বাড়তি টাকা যায়নি। উল্টো আমাদের মলা, মুড়ি ও মিষ্টি খাওয়াইলো। উপজেলার সন্তোষপুর ইউনয়িনের ৭ নম্বর ওর্য়াড ধনিগাগলার বাসন্দিা আনোয়ার হোসেন বলেন, আগে শুনছি রাজার আমলে এভাবে বছরের শেষ দিন হালখাতা করে খাজনা নিতো। আজ আমি নিজে দিলাম। খুব ভালো লাগছে। এটা চালু থাকা দরকার। হালখাতা করতে আসা অনেকেই সন্তোষ্টি প্রকাশ করেন ব্যবস্থাপনা নিয়ে।
বিশিষ্ট্য ব্যবসায়ী হারিসুল বারী রনি বলেন, এ হালখাতা যুগোপযোগি সিদ্ধান্ত। শুধু ভুমি অফিসে নয়; যেসব অফিসে সাধারণ মানুষের সাথে আর্থিক লেনদেন আছে সেসব প্রতিষ্ঠানে সরকারের হালখাতা করা উচিৎ। তাহলে মানুষ দূর্ণীতি থেকে রেহাই পাবে। প্রভাষক গোলাম রসুল রাজা বলেন, আমরা আশা করছি হালখাতার মধ্য দিয়ে মানুষের প্রয়োজনীয় এবং যৌক্তিক সেবা পাবে। হালখাতার আয়োজন কারিদের ধন্যবাদ জানাই আমরা।
হালখাতার আয়োজকরা বলছেন, বাংলা সন চালুর শুরুতে হালখাতা শুরু হয়। যা পরবর্তীতে বাঙালিদের জীবনের অংশ হয়ে যায়। জমিদারি প্রথা গেলেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হালখাতা হতো। কিন্তু নানা কারণে এখন আর হালখাতা হয়না তেমন। হারিয়ে যাওয়া সে হাল খাতা ফিরিয়ে আনতে উপজেলা প্রশাসন এ আয়োজন করেছে। আজ পুরো উপজেলা জুড়ে চলছে হালখাতা। আগামীতে এমন আয়োজন করার কথাও বলেন বক্তারা।
নাগেশ্বরী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান বলেন, মানুষকে সহজ পদ্ধিতিতে সেবা দেয়ার চাহিদা আমাদের সব সময় থাকে। কিন্তু ভুমি কর দিতে সাধারণ মানুষ বাড়তি ঝামেলায় পড়ে প্রায়ই। সে কারণে বাঙ্গালীর প্রাণের উচ্ছ্বাস পহেলা বৈশাখ ঘিরে হালখাতার আয়োজন করা হয়েছে। ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিব্বির আহমেদ বলেন, মানুষকে সহজে সেবা এবং সঠিক সেবা দিতে একটি টার্গেট নিয়ে এ হালখাতার আয়োজন। সবার সহযোগিতা আমরাও উচ্ছাসিত।