ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা রয়ে গেছে - নাহিদ ইসলাম

ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বুধবার(২ জুলাই) দুপুরে কুড়িগ্রাম ঘোষপাড়া মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি ফলকের সামনে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র সংক্ষিপ্ত পথসভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। মন্তব্য করতে গিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ন্যায্য দাবী নিয়ে আমরা রাজপথে নামলে আমাদের বুকে গুলি চালানো হয়েছিল। গুম করা হয়েছে। আপনারা আমাদের সাথে রাস্তায় নেমেছিলেন। আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও সেই ফ্যাস্টি ব্যবস্থা রয়ে গেছে। সেই মাফিয়াতন্ত্র, সেই সন্ত্রাস, সেই দখলদারিত্ব কিন্তু রয়েই গেছে। ফলে আমরা মনে করি আমাদের লড়াই শেষ হয়নি। সেই লড়াই চলমান রাখার জন্যই নতুন দেশ গঠনের জন্য আমরা আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি। যে গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব আকেটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি। এই জাতীয় নাগরিক পার্টি গঠন হয়েছে যে বাংলাদেশের মানুষকে যাতে আর লাশ হয়ে না শুয়ে থাকতে হয়। বোবা হয়ে না থাকতে হয়। আমরা যাতে স্বাধীন নাগরিক হিসেবে এই দেশের সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারি। সকল দায়িত্ব এবং অধিকার বুঝে নিতে পারি।
জুলাই যাত্রার দ্বিতীয় দিনে দুপুর সাড়ে ১২টায় পদযাত্রা নিয়ে রংপুর থেকে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে প্রবেশ করে এনসিপির নেতাকর্মীরা। পরে পদযাত্রাটি ত্রিমোহনী বাজার এলাকা হয়ে দুপুর ২টায় ঘোষপাড়া মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি ফলকে পৌচ্ছায়।
পদযাত্রায় এনসিপির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, সামান্তা শারমিনসহ কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা অংশ নেন।
পথ সভায় উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, আপনারা যেন কোন দলের দাসে পরিনত না হন। আপনারা যেন কোন মার্কার কাছে নিজের বিবেককে বন্ধন না দেন। আপনারা যেন কোন ব্যক্তিকে ক্ষমতাসীন মনে করে সৈরশাসক বানিয়ে না দেন। ২৪ এর অভ্যত্থানে যেভাবে লড়াই করে আপনারা খুনি হাসিনার মতো ফেরাউনের পতন ঘটিয়েছেন তার চেয়ে বড় ফেরাউন এই কুড়িগ্রামে এখনও হয়নি। আগামীতে যারা চাদাবাজি করে, দখলদারিত্ব করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে, মামলা বাণিজ্য করে, লুটপাট করে তারা যেন আপনাদের নেতা না হয়। তারা যদি আপনাদের নেতা হয় তাহলে আপনাদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবেনা।
দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ পুলিশ বাহিনীকে ঈঙ্গিত করে বলেন, আমাদের সামনে যেসব পুলিশ ভাইয়েরা আছেন, তাদেরকে আমরা বলেতে চাই, বিএনপির পুলিশ হইয়েন না। আওয়ামীলীগ পুলিশকে আওয়ামীলীগ বানাতে চেয়েছিল তার পরিনতি আপনারা দেখেছেন। আমরা আপনাদের বলবো কোন রাজনৈতিক দল পন্থী না হয়ে আপনারা বাংলাদেশ পন্থী পুলিশ হয়ে উঠুন। আমাদের এনসিপির পুলিশ প্রয়োজন নাই। এনসিপি মনে করে জনতাই বৈধতা এবংজনতাই হচ্ছে ক্ষমতা। আমরা দেশটার উন্নয়ন চাই।
এর আগে জেলার রাজারহাট উপজেলা শহরের ব্যাংক মোড়ে পথসভা করে এনসিপি। এখানে নাহিদ ইসলাম বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে কোন টালবাহানা জাতীয় নাগরিক পার্টি মেনে নিবে না। বাস্তবসম্মত উপায়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা করতে হবে। উন্নয়ন পরিকল্পনায় কুড়িগ্রামকে পিছিয়ে দেওয়া না হয় সেভাবেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা করতে হবে। বলেন, আমাদের নতুন বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু আমরা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠন করতে পারিনি। তিনি কুড়িগ্রাম সম্পর্কে বলেন বৈষম্য অবহেলা দূর্দশা এবং বঞ্চনার আর এক নাম হচ্ছে কুড়িগ্রাম। কুড়িগ্রামের প্রান্তিক মানুষের উন্নয়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ দাবী করতে পারি না।
রাজারারহাটের পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আগামী ৩ আগষ্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ পূনঃগঠনের জন্য আমরা ইশতেহার ঘোষনা করবো। গণঅভ্যূত্থানকে যারা ব্যর্থ করতে চাচ্ছে ষড়যন্ত্র করতে চাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও প্রতিহত করবো ৩আগষ্ট শহীদ মিনারে।’
পদযাত্রায় অংশ নিয়ে সংক্ষিপ্ত পথসভায় কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন আহ্বায়ক কৌলাশ চন্দ্র রবিদাস, ড. আতিক মুজাহিদ, সামান্তা শারমিন এবং মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ বক্তব্য দেন। পথসভার সঞ্চালনা করেন দলের মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম।
পরে নাহিদ ইসলাম কুড়িগ্রাম জেলার সন্তান ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদকে কুড়িগ্রাম-২ আসনের প্রার্থী হিসাবে সকলের সমর্থন চেয়ে সমাবেশ শেষ করেন। দ্বিতীয় দিনের মতো কুড়িগ্রাম জেলা শহরের পদযাত্রায় ও সমাবেশ শেষ করে লালমনিরহাটের উদ্দেশে যাত্রা করেন এনসিপির নেতারা।