ইলন মাস্কের ‘America Party’: ট্রাম্পের তোপের মাজে, কিন্তু নেতিবাচক না বলছেন বিশ্লেষকরা

বিশ্বের শীর্ষ ধনী এবং টেসলা–স্পেসএক্স প্রধান ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন, যার নাম ‘আমেরিকা পার্টি’। যদিও সাবেক মিত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প মাস্কের এই উদ্যোগকে ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন, বিশ্লেষকদের মতে, মাস্কের দল রিপাবলিকানদের জন্য এক গুরুতর হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানদের আসন ২২০টি, আর ডেমোক্র্যাটদের ২১২টি। সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের ৫৩ ও রিপাবলিকানদের ৪৫টি আসন রয়েছে। এই নাজুক ভারসাম্যের মধ্যে ইলন মাস্কের নতুন দলের আবির্ভাব ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পর্যবেক্ষকরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ম্যাট শুমেকার বলেন, “ইলন মাস্কের ‘আমেরিকা পার্টি’ রিপাবলিকানদের জন্য অজানা প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে।”
‘বিগ বিউটিফুল বিল’-এর পরপরই নতুন দলের ঘোষণা
ট্রাম্প সম্প্রতি একটি বিতর্কিত বিল পাস করেছেন, যেটি সরকারের ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেবে। এই বিলের তীব্র সমালোচনা করেন মাস্ক এবং পরে ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠনের ঘোষণা দেন। ধারণা করা হচ্ছে, যারা বাজেট নিয়ন্ত্রণের কথা বলে ভোটে জিতেছেন, কিন্তু ট্রাম্পের বিল সমর্থন করেছেন, সেই রিপাবলিকানদের আসনেই মাস্ক প্রার্থী দিতে পারেন।
মাস্কের রয়েছে বিশাল অনুসারী গোষ্ঠী, বিশেষ করে তরুণ পুরুষ ভোটারদের মধ্যে। তাদের অনেকেই মাস্ককে একজন ‘তারকা ও প্রতিভাধর নেতা’ হিসেবে দেখে থাকেন। জুনে একটি অনানুষ্ঠানিক জরিপে মাস্কের নতুন দলকে ৮০ শতাংশ সমর্থন দিয়েছেন প্রায় ৫৬ লাখ অংশগ্রহণকারী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুমেকার বলেন, “মাস্কের ভাবমূর্তি প্রযুক্তিপ্রেমী তরুণ ও স্বাধীন ভোটারদের কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য, যাদের ভোট মাস্কের না থাকলে রিপাবলিকানদের দিকেই যেতে পারত।”
সবচেয়ে বড় বাধা হলো, যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় কোনো দলের কংগ্রেসে আসন জেতার নজির খুবই দুর্লভ। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রার্থিতা জমা দেওয়ার জন্য যেসব আইনি ও অর্থনৈতিক শর্ত রয়েছে, তা পেরোনো মাস্কের জন্যও চ্যালেঞ্জিং হবে।
তবে রাজনৈতিক পরামর্শক ইভান নিয়েরম্যান বলেন, “ইলনের দল হয়তো নিজেরাই আসন জিততে পারবে না, কিন্তু ভোট কেটে রিপাবলিকানদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ডিস্ট্রিক্টগুলোতে কয়েকশ’ ভোটের ঘাটতিতেই পাল্টে যেতে পারে কংগ্রেসের ভারসাম্য।”
মেরিল্যান্ডের ওয়াশিংটন কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ফ্লাভিও হিকেল বলেন, “রিপাবলিকান ভোটারদের একটা বড় অংশ ‘মেগা’ (Make America Great Again) আন্দোলনের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। মাস্ক তাদের দলে ফাটল ধরাতে পারবেন, এমন কল্পনাও করা কঠিন।”
২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পকে ২৭০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিলেও মাস্কের প্রভাব সীমিত ছিল। উইসকনসিনে তাঁর সমর্থিত প্রার্থী ২ কোটি ডলার খরচের পরও হেরে যান। বিশ্লেষকদের মতে, এটি প্রমাণ করে অর্থ বা খ্যাতি দিয়ে সব জায়গায় ভোটার প্রভাবিত করা যায় না।
ইলন মাস্কের ‘আমেরিকা পার্টি’ এখনো রাজনৈতিক কাঠামো স্পষ্ট করেনি, তবু এটি স্পষ্ট যে—যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী সমীকরণে এই দল ‘কিং-মেকার’ না হলেও ‘স্পয়লার’ ভূমিকা পালন করতে পারে। ফলে ২০২৬ সালের নির্বাচন ঘিরে এখন থেকেই রিপাবলিকানদের মধ্যে কিছুটা উৎকণ্ঠা দেখা যাচ্ছে।