ইরানি পণ্য বাণিজ্যে যুক্ত ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা শুল্কের ঘোষণাও ট্রাম্পের

ইরানের পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অন্তত ছয়টি ভারতীয় কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল বুধবার (৩০ জুলাই) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
একইসঙ্গে বিশ্বজুড়ে মোট ২০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের দাবি, এই কোম্পানিগুলো ইরানি পণ্য আমদানি-বিপণনে ইচ্ছাকৃতভাবে যুক্ত হয়ে নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করেছে।
ভারতের যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে নিষেধাজ্ঞার আওতায়
নিষেধাজ্ঞায় পড়া ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো হলো:
১. আলকেমিক্যাল সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেড (Alkemical Solutions Pvt. Ltd.)
২. গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যালস লিমিটেড (Global Industrial Chemicals Ltd.)
৩. জুপিটার ডাই কেম প্রাইভেট লিমিটেড (Jupiter Dye Chem Pvt. Ltd.)
৪. রমনিকলাল এস. গোসালিয়া অ্যান্ড কোম্পানি (Romniklal S. Gosalia & Co.)
৫. পার্সিসটেন্ট পেট্রোকেম প্রাইভেট লিমিটেড (Persistent Petrochem Pvt. Ltd.)
৬. কাঞ্চন পলিমার্স (Kanchan Polymers)
এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অভিযোগ উঠেছে আলকেমিক্যাল সলিউশনস-এর বিরুদ্ধে, যারা ২০২৪ সালে প্রায় ৮ কোটি ৪০ লাখ ডলারের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল আমদানি করেছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যালস-এর বিরুদ্ধে ৫ কোটি ১০ লাখ ডলারের মিথানল কেনার অভিযোগ রয়েছে।
জুপিটার ডাই কেম টলুইনসহ ৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানির সঙ্গে যুক্ত ছিল।
রমনিকলাল এস. গোসালিয়া অ্যান্ড কোম্পানি-এর বিরুদ্ধে ২ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য কেনার অভিযোগ উঠেছে।
পার্সিসটেন্ট পেট্রোকেম প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের, এবং কাঞ্চন পলিমার্স ১৩ লাখ ডলারের পলিথিন পণ্য কেনে বলে জানানো হয়।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ এবং যুক্তরাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত যেকোনো সম্পদ জব্দ করা হবে। পাশাপাশি, এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বা কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে।
এই প্রতিষ্ঠানের যেসব সহযোগী বা সাবসিডিয়ারি কোম্পানির অন্তত ৫০ শতাংশ মালিকানা তাদের হাতে, তারাও নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে।
এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের ‘Maximum Pressure Strategy’-এর অংশ বলে জানানো হয়েছে, যার মাধ্যমে ইরানের ‘ছায়া নৌবহর’ ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কার্যক্রম দমন করার লক্ষ্য রয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, এসব রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত অর্থ মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অর্থায়নে ব্যয় হয়।
ইরানের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকলেও ২০১৯ সালের পর থেকে ভারত ইরানি তেল আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েছে। তবুও বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান ইরানি পণ্য আমদানির সঙ্গে যুক্ত থেকে নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করেছে বলে দাবি ওয়াশিংটনের।
এর বাইরে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, আগামীকাল ১ আগস্ট থেকে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হবে।
এছাড়া রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র ও জ্বালানি কেনার কারণেও ভারতকে ‘দণ্ড’ দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি, যদিও বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
নিষেধাজ্ঞায় নাম থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশালি ডেজিগনেটেড ন্যাশনালস (SDN) তালিকা থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহারের আবেদন করতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের ভাষ্য অনুযায়ী, এই নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য ‘শাস্তি নয়, বরং আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা।’